পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা St? কথার জন্য লালায়িত হইয়া বসিয়া আছেন । কেহ কাগজে মোড়ক করিয়া কিছু কিছু প্রণামী বাম পাশ্বে রাখিয়া দিতেছে—নায়েবমহাশয় বেরেয়া। কথায়, কাৰ্য্যে, হাসি-তামাশায় সকল দিকেই আছেন । প্যাবীসুন্দরীর প্রসঙ্গেও হালিতামাশা চলিতেছে। মাজিষ্ট্রেটসাহেবের আরদালী সঙ্গীয় বেহার এবং লোকজনের আহারের বিশেষ বন্দোবস্ত করিয়া দেওয়া হইতেছে। ইতিমধ্যে একটি স্ত্রীলোক “আমার বাবা কোথায়, ওরে আমার বাবা কই ? বলিয়া উচ্চস্বরে র্কাদিতে কঁাদিতে কাহারও বাধা না মানিয়া আপিস ঘরের নায়েবমহাশয়ের সম্মুখে মাটিতে পড়িয়া কাদিতে লাগিল । বলিতে লাগিল, “আমার বাবা সন্ধার সময় বাড়ি হইতে আহাব করিয়া আসিয়াছে । নায়েবমহাশয় । আমার বাবা কই ? এই একমাস হয় নাই, তিনকুড়ি টাকা খরচ করিয়া বাবার বিবাহ দিয়াছি। ( উচ্চস্ববে ) ওরে আল্লা ! ও খোদা একি করিলে । ওরে এমন ডাকাত কখনই দেখি নাই। দিনে-দুপুরে ডাকাতি । সাহেবের চাকর হইয়া সুখে থাকিবে, গায়ে কাটার আঁচডটি লাগিবে না, তাহার ফল বুঝি এই হইল ? আপনার আমার ছেলেকে কি কবিলেন ? আমার ছেলে কই নাযেব মহাশয় ? আপনার দুখানি পায় ধরিয়া বলিতেছি, আমাব কালু কোথায় ? দোহাই তোমাদের পিতামাতার, আমার কালুকে একবার দেখাও ” হরনাথ শ্ৰী মিশ্ৰী মাকুম কিন্তু গঠিত পাষাণে। কুঠিয়াল নরব্যাস্ত্র, তার চাকরের মনে মায়া-মমতা থাকা সম্ভবতই অসম্ভব । কিন্তু সে সময় সে কঠিন প্রাণও গলিয়া গেল। কালুর মাতার ক্ৰন্দনে সে নীরস, নির্দয় হৃদয়েও দয়ার সঞ্চার হইল। মায়াবশে সে বিকট চক্ষেও জল ঝরিল। জিহবায় জড়ত আসিল । মুখে কথাটি নাই । যার মুখে সৰ্ব্বদা কথা, মেজাজ গরম, নজর গরম—কালুর মাতার কথা কয়েকটিতে একেবারে বিপরীত ভাব ধারণ করিল। কি বলিবেন, কি করিবেন, কি বলিয়া তাহার কথার উত্তর দিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। ক্ষণকাল পরে বহু কষ্ট্রে বলিলেন, “চুপ কর, চুপ কর, কুঠিতে মাজিষ্ট্রেটসাহেব আছেন । গোল কর না। তোমার কালু ভালই আছে। কোন চিন্তা নাই। তার কিছু হয় নাই। কে বলেছে? মিছে কথা-ও সকলি মিছে কথা। । কালুর মা হরনাথের পদতলে মাথা রাখিয়া কাদিয়া কাদিয়া বলিতে লাগিল, “ওরে বাবা! আমার ঐ একটি ছেলে। বড় দুঃখে ওকে বড় করেছি। ড্রিক্ষা করে