পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ᎼᎽ Ꮰ আশা । আশা আমাদিগকে মাতাইয়াছে,—মজাইয়াছে। আশাই আমাদিগকে ভুলাইয়াছে । জকির আশা কি ? সে কি আশায় মুন্দরপুর গ্রামে ভ্রাতার বাড়ি যাওয়াআসা করিতেছে। গরু, লাঙ্গল, জমি, বাড়ি, ঘর, ধান, টাকা যাহা জকির আশা ছিল, সকলই তো একপ্রকার সম্পূর্ণ হইয়াছে। এখন আর কি আশা ? এ ভাই তো পূর্বেও ছিল। আগে এত যাওয়াআসা হয় নাই। এখন এত ঘন ঘন আসা কেন ? অার একদিন ছাতি, লাঠি হাতে করিয়া জকি ভ্রাতার বাড়ি যাইতে উদ্যত হইলেই ময়না বলিল—“দেখ ! কুটুম্ববাড়িতে এত যাওয়াআসা ভাল নয়।” জকি দাড়াষ্টয়া লাঠি দিয়া মাটি খডিতে খডিতে বলিল—“একটা কথা ছিল তাহাতেই”— “কথা থাকুক সুন্দবপুব যাওয়াআসার কথা সাহেবের কানে গেলে কি ঘটিৰে ? তুমি সাহেবের প্যারাচাকর, তুমি সাহেবের শক্রর এলাকায় কুট দ্বিতী করিতে যাও । নিশ্চয়ই জেনো, সাহেবের কানে গেলে তিনি হাড়ে হাড়ে চটে যাবেন ৷ জল, জঙ্গল, মনিব কোনকালেই আপন নহে । আবার প্যারীসুন্দরীও সাহেবের প্যারাচাকর—মনে যাহা ইচ্ছা তাহাই কবিতে পারেন। “প্যারীস্বন্দরী আমাকে কিছুই বলিবেন না। তিনি আমাকে বড় ভাল বাসেন ৷” ময়না আশ্চর্যাম্বিত হইযা বলিল “তিনি তোমাকে ভালবাসেন ? তার মানে কি ? তুমি কি তাহার বাটিতে যাও নাকি ?” জকি চুপে চুপে কয়েকটি কথা ময়নার কানের নিকট কহিয়া আপন শয়নগৃহমধ্যস্থিত হাতচাঙ্গির উপর হইতে ধুতি-চাদর বাহির করিয়া আনিয়া ময়নাকে দেখাইল । আর যাহা পাইয়াছিল, তাহা আর দেখাইতে সাহসী হইল না। কারণ, সে পাঁচশত টাকার একটি তোড়া—টাকার তোড়া ধানের ভোলের মধো থাকিল । তাহা বাহির করিয়া ময়নাকে দেখাইতে কিছুতেই জকির সাহস হইল না। ময়ন। ধুতি-চাদর দেখিয়া বলিল “দেখ, এ কাপড তুমি কখনই পরিও না । লোকে দেখিলেই সম্বোহ করিবে । তুমি যে কথা বলিয়া সকলকে প্রবোধ দিবে তাহ কেহই বিশ্বাস করিবে না। যে যেমন, তাহার আশাও তেমন। চক্ষও তেমন—পছন্মও তেমন। নিশ্চয় লোকে একথা বলিবে যে, তুমি এ কাপড় চুরি করিয়া জানিয়াছ।