পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ૨૦ જ অতি মৃদু মৃদু স্বরে বলিতে লাগিল—“বোন ! আমি যে, ঔষধ খাইয়াছি কেন, তাহা তুমি বোধহয় জান ? যে জন্য ঔষধ খাওয়া তাহ অপেক্ষা মরণ ভাল । আমার স্বামী বৰ্ত্তমান । ঐ ঔষধের পরিমাণের বেশী অামি খাইয়াছি । যিনি ঔষধ দিয়াছেন, তিনিই আমাকে বলিয়াছিলেন, বড় ভয়ানক ঔষধ । যাহ দিব, তাহার চারিভাগের একভাগ চারিগুণ জলে মিশাইয়া খাইবে। যদি তাহাতে না হয়, তবে সেদিন আর খাইবে না। তারপরদিন আবার ঐ পরিমাণ ঔষধ আটগুণ জলে মিশাইয়া খাইও । এই ছিল ঔষধের ব্যবস্থা । সেই ঔষধের ব্যবহার-নিয়ম জানিয়াও যে অকাতরে শিশিব সমুদায় ঔষধ বিনাজলে পেটে ঢালিলাম কেন ? মরিব বলিয়া । আমার বাচিবাব সাধ নাই । আমি অনেকদিন হইতে মরিয়া বহিয়াছি । বোন ! তুমি তোমার স্বামীকে চিনিতে পার নাই, আমি অনেকদিন হইতে চিনিয়াছি । সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেককে চিনিতে পারিয়াছি । ইহার বিচার অবশ্যই একদিন হইবে । যিনি সকলের বিচারের মালিক, তাহার হাতে একদিন পড়িতেই হইবে। কথা অনেক, কিন্তু বলিবার সাধা নাই। বোন ! একটি কথা বলি— তোমার স্বামীকে তুমি কখনই বিশ্বাস করিও না। তিনি না করিতে পারেন, এমন কোন কাৰ্য্য দুনিয়ায় নাই। মামুষে যাহা কখনই করিতে পারে না, তিনি তাহা টাকার লোভে অনায়াসে কবিতে পারেন । পারেন তো পরের কথা—করিয়াছেন । আর কি বলবো বোন । আর কি বলবো । ঐ যে ধূতি-চাদর দেখিয়াছ, নিশ্চয়ই জানিও ঐ ধুতি-চাদরেই তোমাদের সর্বনাশ হইবে । ঐ কাপড়েই তোমাদের যথাসৰ্ব্বস্ব যাইবে। প্রাণ যাইতেও বড় আশ্চর্য্য নাই । আগেই বলিয়াছি, তোমার স্বামী টাকা পেলে না পারে, দুনিয়ায় এমন কোন কু-কাজই নাই। প্রথম লোভ ধুতি-চাদর তারপর যে লোভ আছে সে লোভ তোমার স্বামী--কখনই সামলাইতে পারিবে না । আমি তো চলিলাম, তুমি যদি বাচিয়া থাক তবে দেখিবে তোমার স্বামীর কি দুৰ্দ্দশা ঘটে। বোন ! “তোমার স্বামী" বলিলাম বলিয়া মনে কোন দুঃখ করিও না। মনের কথা চিরকাল মনেই রাখিয়াছি। এখন আর কেন? ইচ্ছা করিয়ী শিশির সমুদায় ঔষধ খাইয়াছি। খাইলাম কেন ? আপন প্রাণ আপন-হাতে বাহির করিলাম। তাই বলিব না। ময়নার মন জানে, আর সেই পাক-পরঙয়ারদেগার জানেন ।