পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা २ e\> সেই ধবধবে সাদা মুখের হাব-ভাব, সাদা চোখের চাউনির আভাষে, এবং আটসাটা সাতপ্রকার কাপডে ঢাক—সাদা-চর্ম সাদা-অস্থি জড়িত—সাদা কি কালো ঈশ্বর জানেন-কোমল কি কঠিন ভগবান জানেন, সে মনের ভাব বুঝিয়া ব্যক্ত করা উদাসীন পথিকের সাধ্য নহে। জন্মভূমি পশুরাও ভালবাসে, পক্ষীরাও ভাল চেনে, কীট-পতঙ্গ ক্ষুদ্র প্রাণীরাও বোধহয় হঠাৎ ভুলিয়া যায় না। আপন আপন বাসস্থান, বাসা, কোটর, গর্ত, অগাধজলে অনায়াসে চিনিয়া যাওয়াআসা করে । সমবিশিষ্ট—জ্ঞানের ভালবাসাই চেলা, এবং আপন আপন স্থানে সমমমত চিনিয়া, যাওয়া । মিসেস কেনী জন্মভূমিতে পা বাখিয়াই যেন বিবক্ত হইয়াছেন। কেহ দুহাত তুলিয়া, ঘাড় নোওয়াইয়া, মাটিতে মাথা ঠকিযা দস্তবমত সেলাম বাজায় না। সরিয়াও দাড়ায় না । গা ঘেষিয়াই যাতায়াত করে । মান মর্য্যাদার নাম নাই । খানসাম নাই, বেযারা নাই, বাবুরচি নাই, সর্দারবেয়ারা নাই, বয় ( boy ) নাই । সমুদায় কাজ নিজে করিতে হয় । ইস্তক রন্ধন-লাগাদশয্যা, তাহার পরেও ছি! ছি:! বড় ঘৃণার কথা । নিজের মলমূত্র নিজেই পরিষ্কাব-চিঠিখানা দিতে হলেও ডাকঘবে নিজে যাইতে হয় । হুকুমেব-র্তীলে কেহই খাটে না । একে বলিতে দশজন আসিয়া উপস্থিত হয় না। অন্যায হুকুম কেহই শুনে না । ভদ্রতা ব্যবহারে কার্য্য করিতে হয়, কথা বলিতে হয় । সকলের সহিত নম্রতা এবং ভদ্রতা ব্যবহার না করিলে বড়ই অপদস্ত হইতে হয় । চক্ষু রাঙ্গাইয়া, সাদা মুখ বাকা করিয়া কাৰ্য্য লওয়া দূরে থাকুক, প্রতি কার্য্যে ধন্যবাদ না দিলে, অসভা, জঙ্গল বলিয়া বেতনভোগী কার্যাকারকেরাও উপেক্ষা কবে । নির্ধারিত এবং নিয়মিত কার্য্য সময়েই একটু নরম বোধহয় । তাহারপরেই যেন অন্যভাব। খাওয়া দাওয়াতেও অমুখের একশেষ। মুরগী মেলে না। আগু পাওয়া যায় না। তরকারীও তথৈবচ। পাওয়া যে না যায় তাহা নহে । দাম কত ? সে দামের কথা হঠাৎ শুনিলে, সোনার ভারতের কথা মনে পড়ে। এইপ্রকারে মিসেস কেনী ভাবিতেছেন আর বলিতেছেন—এমন প্রভুভক্ত দেশ কোথাও নাই, আমার বোধহয় জগতে নাই। . চাকরে-মনিবে কি সম্বন্ধ, রাজা-প্রজায় কি সম্বন্ধ, তাহা ভারতবাসীরাই জানে । সেকথা আর কি বলিব । আমাদিগকে দেবদেবীর ন্যায় পূজা করে। রাস্তা-ঘাটে। দেখিলে সেলাম বাজাইয়া পঞ্চাশ হাত সরিয়া যায়। দিবারাত্রি খাটুনি-চাকর