পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ·没粤@ পড়িলেই ঘরের মধ্যে লুকায়। একট, বেশি বয়স হইলে জন্মদাতা পিতার সম্মুখে আসিতেও লজ্জা বোধকরে এক পরিবারস্থ একবাড়ির আপন আত্মীয়-স্বজন-- এমন কি পিতার সম্মুখেও আহার কবে না। স্বামীসহ সৰ্ব্বদা একত্র উঠাবস করিতে মাথা কাটিয়া ফেলিলেও স্বীকার হয় না। অন্তের কথা কে বলে। পুরুষেরাই সৰ্ব্বেসৰ্ব্বা, পুরুষেরাই তাহাদের হৰ্ত্তাকর্তী একরূপ বিধাতা। স্বামীমুখে কতকথা শুনিতেছে, কত বকুনি খাইতেছে সময় সময় স্ত্রীলোকের গায়ে হাত তুলিতেছে, প্রহার পর্য্যস্ত করিতেছে। নালিশ নাই, ফরিয়াদ নাই, পুরুষে সকলই পারে। লোকেরা কেবলই সহ করে। এত কষ্ট, এত অস্থখ, এত যন্ত্রণ, তবু পিতামাতায় ভক্তি, ভ্রাতাভগ্নীতে ভালবাসা, স্বামী-স্ত্রীতে একাত্মা, একপ্রাণ কি আশ্চৰ্য্য । এমন আশ্চর্য্য দেশের কথা কোথায় ও শুনি নাই । কেতাবে স্বর্গের কথা শুনিয়াছি, মিথ্যা বলিতেছি না, আমবা সেই স্বর্গের রাজ্যে বাস করিতেছি । এই কতকদিনে আমার মন বড়ই চঞ্চল হইয়াছে। ক্ষণকালও আর এদেশে থাকিতে ইচ্ছা হইতেছে না। আজই মিষ্টার কেনীকে পত্র লিখিব এবং এই সপ্তাহেই দেশের মুখে চুনকালি দিয়া সোনার ভাবতে যাত্রা করিব। বাপরে ! এমন বে-আদব, বেতমিজ দেশে ভদ্রলোক বাস করে ? সকলই সমান। কেহ কাহারও খাতির রাখে না—গ্রাহ করে না—মান্তও করে না । দু-দণ্ড বসিয়া খোসগল্পেও সময় অতিবাহিত করে না। চাকর বেতনভোগী । চাকর মনিবের কত প্রশংসা করিবে, কত প্রকার যশ গান গাইবে । সে কথার আভাষ কাহারও মুখে নাই । নির্ধারিত বেতন, নিয়মিত কাৰ্য্য। আর সকলেই যেন ব্যস্ত, আপন আপন কার্য্যে সকলেই ব্যস্ত। ইস্তক লক্ষ্যপতি ধনী, লাগাদ মুটে, মজুর, সকলেই আপন আপন কার্য্যে সমান ব্যস্ত। কায্যের মূল্যে অবশুই নূ্যনাধিক আছে। কিন্তু ব্যস্ত ও যত্বের মূল্য সকলেরই সমান। এমন কড়া দেশে আর আমার বাস করা সাজে না । আমি শীঘ্রই এদেশ পরিত্যাগ করিব। এ জীবন থাকিতে আর জন্মভূমির নাম করিব না | মিসেস কেনী সেইদিবসই শালঘর মধুয়ায় কেনীর নিকট পত্র লিখিয়া নিজে ভকখরে দিয়া আসিলেন। পত্রের ভাবাৰ্থ এই যে বিচ্ছেদ-যন্ত্রণ বড়ই কষ্টকর । , নাথ! আর আমার সহ হয় না! বিরহবেদনায় বড়ই অস্থির হইয়াছি। প্রাণ যায় যায় হইয়াছে। এরূপ ঘটিবে আগে জানিলে, বিরহে এত যাতনা জাগে বুধিলে,