পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনেব কথা ३ छ। °ी নৌকা (ষ্টিমার) প্রায়ই উজান-ভাটি যাতায়াত করে। কিন্তু কোথায় যায়, কোথা হইতে আইসে তাহার খোজ খবর কেহই রাখেন না। সকলের মনেই বিশ্বাস যে, সাহেবলোক ন হইলে, ধুমাকলের নৌকায় দেশীলোকের চড়িবার অধিকার নাই। সাহস করিয়া সে সময় ষ্টিমারে চড়িতেও কেহ ইচ্ছা করে নাই। নদীগর্ভে দপদপ শব্দ হইলে এবং আকাশে ধোয় দেখিলেই তীরস্থ গ্রামবাসীরা আপন আপন কৰ্ম্ম ফেলিয়া নদীতীরে আসিয়া উপস্থিত হইত এবং চলতি টমার দেখিয়াই চক্ষু জুড়াইত। নদীতীরে যে যে স্থানে পাথুরিয়া কয়লার আড্ডা, সেই সেই স্থানে ষ্টিমার আগাইয়া কয়লা লইয়াই চলিয়া যাইত। কোন আরোহী কি বাঙ্গালীব মালামাল লহঁত না । কেহ মাল দিতেও প্রস্তুত হইত না । কোম্পানীর কার্য্যই কবিত, মালামাল যাহা কিছু আমদানী-রপ্তানি হইত সে কুটয়াল নীলকরের একচেটিয়া । মীবসাহেব নৌকাযোগে সিরাজগঞ্জ যাইতেছেন । বিছান, বালিশ, খাদ্যসামগ্রীর ভার, ভাবে ভারে দাড়ী-মাঝিরা এবং কুলী মজুরের নৌকায় তুলিতেছে। বাবুবচিখান নৌকোয়—জালানী কাষ্ঠ, বাউলী, বটি, হাতা, তামার পাতিল বাকা বোঝাই করিযা উঠাইতেছে। বসীরুউদ্দিন নিজের কাপড়ের গাটরী, সেতার, তবলা ইত্যাদি বাহকের মাথায় দিয়া নৌকায় উঠাইতেছে, পাশা খেলার কোট, গুট আপনহাতে রাখিয়াছেন । স! গোলাম, দেবীপ্রসাদ এবং অন্যান্য কৰ্ম্মচারী, দুই চারিজন প্রতিবেশী মীরসাহেবের সঙ্গে সঙ্গে নদীতীবে নৌকা পর্যাস্ত যাইতেছেন। সা গোলামের মুখে কথা নাই, বড়ই দুঃখিত, বড়ই চিন্তিত ! এত চেষ্টা কবিয়াও কোন ফল হইল না, অছিয়তনামা হাতে আসিল না। কি হইল ? শেষে কি হইবে ? এই চিন্তাতেই একবারে সারা হইতেছেন। আহার-বিহারে, সাংসারিক কার্য্যে কিছুতেই মন নাই —কিছুতেই আরাম নাই, বড়ই উদ্বিগ্ন-চিস্তার সহিত উদ্বিগ্ন । অছিয়তনামা নিশ্চয়ই মীরসাহেবের হাতবাক্সে আছে, এইটি তার ধ্রুব বিশ্বাস । এইতো হাতছাড়া হইয়া চলিল। এইতো চলিয়া গেল। আর কি হইবে। সকল আশায় ছাই পড়িল । ঐ তো এখনি হাতবাক্স হাতছাড়া হইয়া চলিল। উপায় কি ? মনের আশা মনেই মিটয়া গেল। মধ্যখানে কতগুলি কথা দেবীপ্রসাদের কানে গেল। একবার মনে করিলেন, হাতবাক্সটা চাকরের হাত ।