পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ > ● মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ কালিতে, কোন কাগজে লিখিয়া দিবে ? পৈতৃক সম্পত্তি, বাহার আয়ের প্রতি নির্ভর করিয়া কতজনার প্রাণ বাচিতেছে। কত বিধবার জাতি, ধৰ্ম্ম রক্ষা পাইতেছে। কত পিতৃহীন বালকের একমুঠো ডালভাতের সংস্থান রহিয়াছে। কত পুত্রহীন বৃদ্ধার জীবনোপায়ের উপায় বৃহিয়াছে। কোনপ্রাণে বিনাপণে লিখিয়া দিবে ? আবার প্রাণেও আর সহ হয় না। কষ্টের দিন শীঘ্ৰ যায় না। সে রজনী শীঘ্র প্রভাত হয় না। এ সকল সহিয়াও সমসের আলী ভ্রাতুষ্প ক্রগণসহ আজ ছয়মাস বন্দী । সেই যে বসন পড়িয়া শয়ন করিয়াছিল, সেই যে বিছানা হইতে হাত পা রাখিয়া, নিশীযোগে ডাকাতের ন্যায় কেনীর লাঠিয়াল সমসের আলীর বাড়িতে পড়িয়া, শযনঘরের দরজা ভাঙ্গিয়া কুঠিতে আনিয়াছে। ভ্রাতুপুত্ৰগণ বৃদ্ধ খুড়ার উদ্ধারহেতু কুঠিতে ইচ্ছাপূৰ্ব্বক আসিয়া ধরা পডিয়াছে, ফঁাদে জাটকিয়াছে, গারদখানায় নীত হইয়া বৃদ্ধ খুড়াব সহিত ষন্ত্রণাব একশেষ ভোগ কৰিতেছে। ক্ষেীর কার্য্য নাই। চুল বাড়িয়াছে, হাতপায়ের নখ বাড়িয়া সেই এক বিশ্ৰীভাব ধারণ কবিয়াছে। চিস্তায়, ভাবনায়, পেটের জালায় অস্থি-চৰ্মসার হইয়াছে। যাহাঁদের বীরত্ব কুষ্টিয়া অঞ্চলে প্রসিদ্ধ, সেই সকল বীরবাহুগণ, বীরশ্রেষ্ঠ বীরগণ অন্নাভাবে ক্ষীণকায় এবং হীনবল হইয়া জরাগ্রস্ত চিররোগীর ন্যায় গারদের মধ্যে পডিয়া জীয়ন্ত মৃত্যুযাতনায় অস্থির হইয়া ছটফট কবিতেছে। কে দেখে ? কে জিজ্ঞাসা করে ? সূৰ্য্য-অস্ত না হইলে আর দ্বার খোলা হয় না । পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হইলেও কেহ ডাকিয়া জিজ্ঞেস করে ম{। কাছে আসে না, একঘট জল এগিয়ে দেয় না। খুড়া-ভাইপোয়ে অতি ক্ষীণস্বরে কথাবার্তা হইয়া সাব্যস্ত হইয়াছে যে, আর কতকাল এভাবে থাকিব। সাহেব যে প্রকারে লিখাপড়া করিতে চাহে, দিয়া চল অন্যদেশে ভিক্ষা করিয়া জীবন রক্ষা করি। পরিবার প্রতিপালন করি । এ-কষ্ট আর সহ হয় না। এ-যন্ত্রণা আর প্রাণে সয় না। সম্পত্তির জন্যই যখন এতকষ্ট তখন আর সে সম্পত্তিতে লাভ কি ? বিপদসাগরের একমাত্ৰ কাণ্ডারই নগদ অর্থ বা ভূসম্পত্তি। ভাগ্যক্রমে আমাদের সেই সম্পত্তিই আমাদের কাল হইয়াছিল । সম্পত্তি ছিল বলিয়াই এতকষ্ট । পৈতৃক বিষয়বিভব ছিল বলিয়াই আজ আমরা কেনীর গারদে। সন্ধ্যার পর দরজা খুলিবেই, একঘট করিয়া জল দেওয়া-ওটা একটা ভান মাত্র । দুবেলা দুবার দরজা খোলার কারণই এই যে, আমরা কোন কৌশলে পলাইয়া-প্রাণ রক্ষা করি, কি