পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

☆ > 8 মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ চক্ষে ধরিলেন। দেখিলেন, এৰারে স্পষ্ট দেখিলেন। সেই বজরা—সেই তাঁহারই কুঠির বজরা। যে বজরায় মেমসাহেব কলিকাতায় গিয়াছিলেন । * স্ববাতাস পাইয়া পাইলভরে জল কাটিয়া স্রোত ঠেলিয়া যেন উড়িয়া আসিতেছে। দেখিতে দেখিতে বজরা নিকটবৰ্ত্তী হইল, পাইল পডিয়া গেল সকলেই দেখিল মেমসাহেব ছাতের উপর ইজিচেয়ারে কুঠির দিকে তাকাইয়া আছেন। মূহুর্তমধ্যে বজরা ঘাটে লাগিল। লাগিবামাত্র সিড়ি পড়িল । টি. আই. কেনী ত্ৰস্ত-পদে যাইয়া প্রিয়তমার হস্ত ধারণ করিলেন । কমলমুখীর কমলদলসদৃশ মুখম গুলের সুখবোধ-স্থানে বাব বার চুম্বন কবিলেন । এবং প্রাণ প্রতিমার দক্ষিণহস্ত বামবগলে চাপিয়া ধীরে সিডি দিয়া নামিয়া ফুলবাগানে প্রবেশ করিলেন । মেমসাহেবের আসবাব, লওয়াজিমা ঘরে উঠতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে সন্ধ্যাদেবী জগৎ অস্বীকার করিয়া লোকের চক্ষুজ্যোতি হরণ করিলেন । ৰিরামদায়িনী নিশা সমাগত হইয়া পুরাতন দম্পতির বিচ্ছেদের পর মিলনসুখের সুযোগ করিয়া দিয়া ক্রমে অগ্রসর হইতে লাগিলেন । চন্দ্রমা হাসিতে হাসিতে, তাবাদল ফুটিতে ফুটিতে সময় সময় মিটিমিটি ভাবে চাহিতে চাহিতে, বিমানরাজ্যে বিহার করিতে করিতে ক্রমে রজনীক শোভাবৰ্দ্ধন কবিতে লাগিলেন । পুরাতন-দম্পতি বিশ্রামগুহে, মখমলমণ্ডিত-কোঁচে উপবেশন কবিয়া হাসিমুখে নানাপ্রকার কথাবাৰ্ত্ত কহিতে লাগিলেন । সোনাউল্লার স্ফুক্তি দেখে কে ? সর্দার বেহারার ছুটাছুটির অস্ত পায় কে ? দেয়ালগীব, ল্যাম্প, লণ্ঠন, হাতবাতি যেখানে যাহা প্রয়োজন মনের আনন্দে জালিয়া দিয়া মেমসাহেবের শয্যার আয়োজনে প্রবৃত্ত হইল । নিয়মিত সময় সাহেব, মেমসাহেব আহারাদি সমাপন করিয়া আপন আপন শষ্যায় গমন করিলেন। মিসেস কয়েকমাস পরে কুঠিতে আসিয়াছেন। পরিবর্তনশীলা জগতে পরিবর্তন কথা নূতন নহে। মিসেস কেনী রাত্রিবাস পরিধেয়ে অঙ্গ ঢাকিয়া পালঙ্কে বসিয়াছেন । মনে নানাকথা উদয় হইয়াছে। স্বামীর হাবভাব, চাকরদের মুখভাব দেখিয়া তাহার মনে মনে নানাপ্রকার সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছে। র্তাহার অনুপস্থিতকালে, বিশেষ কোন ঘটনা যেন ঘটিয়া গিয়াছে। কি ঘটিল ? কি হইল ? এমন ঘটনা কি ? কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। অনেক চিন্তা করিলেন, কোন কিছুই স্থির হইল না। স্বভাবতঃই হউক কি চিত্তের বিকারেই