পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ ما لا جة জলিয়া উঠে। মাখন দ্রুকুঞ্চিত করে, চক্ষু পাকল করে, ভার ভার মুখখানি আরও ভারি করিয়া সরিয়া যায়। জকির মুখ দেখিতেই একেবারে নারাজ। কি করে, উপায় নাই । আর কি করিতে পারে ? ভারতে স্ত্রীর নিকট স্বামীর বড়ই মান ও আদর। বড় করিয়া কথা কহিতেও ভয় করে। স্বামী দেবতা, স্বামী অন্নদাতা, স্বামী বিধাতা, স্বামী ত্রাণকর্তা,— স্বামীই বুদ্ধি, স্বামীই বল, স্বামীই সকল, স্বামী পদসেবা করাই কুলীর প্রধান ধৰ্ম্ম । জকি আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল যে, স্বন্দরপুরের কোন লোক আজ আসিয়াছিল ? মাখনা বলিল—“একটি লোক আসিয়াছিল। তোমার নাম করিয়া ভাই! ভাই! বলিয়া, কয়েকবার ডাকিয়া কোথায় চলিয়া গেল । বাটিতে কেহই ছিল না আমি কোনকথার উত্তর দেই নাই।” জকি রোষভরে বলিল—“এমন হতভাগিনী তো আর দেখি নাই যে, আমি বাটিতে নাই বলিয়া কি আর কাহার সহিত কথা কহিতে নাই ? তোদের তো বুদ্ধি নাই। তোরা মাহুষ ও নহিল। বনের পশুও নহিস । একটি কাজ নষ্ট হইয় গেল।” মাখন বলিল—“আমি কি জানি, তোমার সহিত তাহার কি কাজ । ভাই ভাই করিয়া ভাকিল, আমি বেড়াব আডালে থাকিয়া দেখিলাম সে একা নহে । তাহার সঙ্গে আরও একটি লোক আছে । আর সেই লোকটির বগলে কাপড়ে জড়ান একটা ভারী কি জিনিস আছে। অনেক ডাকাডাকি করিয়া বগল হইতে কাপড়ের পুটলি মাটিতে ফেলিতেই বোধহইল যেন কতকগুলি পয়সা কি টাকাই একত্রে বান্ধা ।” জকি শুনিয়াই অস্থির। প্রকাশ্বে বলিতে লাগিল—“তোদের কিছুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান নাই ! আমি সাহেবের কুঠিতে থাকিয় দেখিতেছি, নুতন কোন সাহেব আসিলে মেমসাহেব নিজে যাইয়া আগু বাড়াইয়া আনেন। দুইজনে চুমা খাওয়া হয়, গলায় গলায় মিশিয়া হাত ধরাধরি হয় । তোরা কোন কার্য্যের নহিস। কেবল ঘোমটা—তোদের কেবলই ঘোমটা ।” “আমি গরিব, দুঃখী বাঙালীর মেয়ে। বাঙ্গালা আমাদের দেশ । আমার দেশের চাল-চলন যাহা আছে তাহাই করিব। সাহেব বড়লোক, দেশের রাজা । র্তাহারা যাহা করেন, আবার সে সকল দেখিয়া দরকার কি ? আমি গরিব মাহুষ, মেমসাহেবের মত ব্যবহার করিতে আমার ক্ষমতা নাই। হইবেও না ।”