পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ՀՋ: মেমসাহেব চা-দানি হইতে, প্যালায় চা ঢালিয়া কেনীকে দেখাইলেন—চার আসল রং নাই। একটু ময়লা ময়লা রং ! বেশী কড়া হইলেও এরূপ হয় না। টি. আই. কেনীর মনে সন্দেহ হইল। প্যালার চার মধ্যে এক টুকরা রুটি ভিজাইয়া মেমসাহেবের কুকুরকে খাইতে দিলেন। টরী লেজ নাড়িতে নাড়িতে চপর চপর শব্দে বিষাক্ত রুটি উদবস্থ করিল। কেনী ঘড়ি ধরিয়া থানারকামরাতেই বসিয়া রহিলেন । ত্রিশ মিনিট অতীত হইতে টরী ভারী-অস্থির হইল । এদিক ওদিক ছুটাছুটি করিয়া বেড়ায়, একখানে স্থির হইয়া থাকিতে পারে না। গড়াগড়ি দেয়। অস্বাভাবিক স্বরে খেউ খেউ করে । খানসামা, খেদমতগার, বাবুরুচির মুখ শুকাইয়া গেল। একঘন্ট। পূর্ণ না হইতে টরী মাটিতে হাত-পা ছড়াইয়া পড়িয়া গেল। গড়াগড়ি পড়িয়া হাউ-মাউ করিতে করিতে একেবারে নিস্তেজ হইয়া পড়িয়া গেল । সোয়া-ঘন্টার মধ্যে কুকুরের চেতনা রহিত, মৃত্যু। কেনী ক্রোধে অধীর হইয়া জমাদারকে ডাকিয়া বলিলেন—“যত সর্দার, বরকন্দাজ, লাঠিয়াল আমার চাকর আছে, এই মুহুর্তে যাইয়া জকিকে বান্ধিয়া আমার সম্মুখে উপস্থিত কর।” জমাদার সেলাম বাজাইয়া, তখনই লাঠি ঘাড়ে করিয়া ছুটিল। জকির প্রতি কেহই সন্তুষ্ট ছিল না। অনেকে পূৰ্ব্ব-দাদ তুলিতে সর্দারের সঙ্গি হইয়া জকিকে ধরিয়া আনিতে চলিল। কেনী—সোনাউল্লা, সর্দার, বেহার, বাবুরচি, মশালচি, পাখাওয়ালা সমুদায় চাকরকে আটক করিয়া রাখিলেন। জমাদারদিগকে জকির বাড়ি পর্যস্ত যাইতে হইল না। জকি কুঠিতেই বুরিয়া বেড়াইতেছিল । সাহেবের খানাখাওয়া হইলে ছটফট দেখিয়া সুন্দরপুর যাইবে মনস্থ করিয়াছিল। তাহা আর ঘটিল না । ঈশ্বর টি. আই. কেনীকে বৃক্ষ করিলেন। একজনের চক্ষে পড়িতে পড়িতে জকি দশজনের চোখে পড়িয়া ধুত হইল । বন্ধন-অবস্থায় সাহেবের নিকট আনীত হইল, সাহেব দালানের খাম্বার সহিত বান্ধিতে আদেশ করিয়া, হামচাদ বাহির করিয়া আনিতেই জকি বলিতে লাগিল—হজুর । আমাকে প্রাণে জরিবেন না। আমি যখন ধরা পড়িয়াছি আমার জীবন শেষ হইয়াছে। আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন । টি. আই. কেনী কিছুতেই ক্রোধ সম্বরণ করিতে পারিলেন না। দুই চার ঘা মারিতেই জকি বলিতে লাগিল-আমি বিষ দিয়াছি। ধর্শ্ববতার। আমি