পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ર 8 মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ কেনী এবারে নিশ্চয়ই টাকা লুটিয়া লইবে। তাহার ইচ্ছ। এই যে, টাকা লুটিয়া লইলে, যশোহরের খাজনা দাখিল হইবে না। মহাল লাটে উঠবে। যত টাকাই হউক, নিলাম ডাকিয়া খরিদ করিবে । বাবু সে-বিষয কোনই যোগাড় করিতেছেন না। কেনী যে দুরন্তলোক—সে যাহা মনে করিয়াছে তাহা করিবেই, করিবে । সম্পত্তি নিলামে উঠিলে কি আর রক্ষা আছে ? কার সাধা কেনীর সম্মুখে নিলাম ডাকে ? কোন কোন পাঠক বলিতে পারেন, কথাটা এমন গুরুতব নহে । নোট খরিদ করিয়া ডাকে পাঠাইলেই তো হইতে পারিত। সে সময় নোটের চলতি এত ছিল না। ডাকবিভাগের অবস্থাও এত ভাল ছিল না । মহকুমা, ব্যতীত গ্রামে গ্রামে ডাকঘরও ছিল না । টাকারই কারবার । নগদ টাকারই বেশী চলতি । ভৈরববাবুর বৈঠকখানা অতি পবিস্কাব। ফরাসের চাদর, বড় বড় তাকি য়ার খোল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। বাবু বড় একটি তাকিয়ায় ঠেস দিয়া বসিয়া আছেন। সোনা-বান্ধান, রূপ-বান্ধান হকাগুলি, ধুতরাফুলে কলকি ও রূপার সরপোষ মাথায় করিয়া বৈঠকের উপর বসিয়া আছে গুডগুড়িও মজলিসে স্থান পাইয়াছে। হামাদানে বাতি জলিতেছে, দুই একটি দেয়ালগিরি ও নারিকেলতেলে জলিতেছে। ভৈরববাবু বড় শৌখিন, সঙ্গীতবিদ্যায় মহাপণ্ডিত। প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর সঙ্গীত শাস্ত্রের আলোচনা হয় । অন্তও হইতেছে। প্রধান শিন্ত মাধবচন্দ্র রায় তানপুরা লইয়া, স্বরট, মল্লার খেয়াল ধরিয়াছেন। বাবুর মধ্যম পুত্র দেববাবু পাখওয়াজ বাজাইতেছেন । পিতার নিকটেই শিক্ষা, অন্যান্য শিষ্য অপেক্ষা পাখওয়াজ-তবলায় দেববাবুর হাত খুব খুলিয়াছে। চমৎকার বোল উতরিয়াছে। অশ্লীলতা শ্রুতি-দোষ, দোষভাবাপন্ন কোনপ্রকার গান তাহার বৈঠকখানায় স্থান পাইবার অধিকার ছিল না। প্রধান কাৰ্য্যকাৱক মহাশয় সেলাম বাজাইয়া দণ্ডায়মান হইলে, ফরাসের একপাশ্বে বসিতে অনুমতি পাইলেন। সে সময় আর খাজনা পাঠানোর কথা কহিতে অবসর পাইলেন না। কেনীর চক্রাস্তের কথাও বিশেষরূপে বাবুকে বুঝাইয়া বলিতে পারিলেন না । সেদিন বড় জীকাল-মজলিস। প্রাচীন নগর দিল্লী হইতে বিখ্যাত কালওয়াত খাজা খা আসিয়াছেন। মাধববাবু গান শেষ করিয়া তানপুর রাখিলেন। খাজা খা বৃহৎ এক তানপুরা লইয়া, সাত আটবার সেলাম বাজাইয়া তালপুর ক্রোড়ে করিয়া বসিলেন।