পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ર ૨૧ জাটাঙ্গাটি নিয়মও নাই। অনায়াসেই বাহির আঙ্গিনায়, পূজার প্রাঙ্গণে—ইচ্ছা করিলে অন্দরখণ্ডেও ফকির, বৈষ্ণব যাইতে পারে। কোন বাধা নাই । গোয়েন্দা যে সংবাদ পায়, সুযোগ মত অম্লচর, সহচর, সঙ্গীলোক দ্বারা সমুদায় খবর কুঠিতে পাঠায়। এখন ভৈরববাবুর বাড়িতে বৈরাগী বাবাজির আগমন। চারদিক ঘুরিয়া ফিরিয়া সন্ধান লইতেছেন । ইতিপূৰ্ব্বে আরও কয়েকদিন বৈরাগীঠাকুব বাবুর বাড়িতে যাইয় ভিক্ষা আনিয়াছেন। সুযোগ আর সময় পাইলে অন্দর মহলে গিয়াও দুই একটি গান শুনাইয়া পাড়ার ছেলেমেয়ে একত্র করিয়া ভিক্ষা করেন। আজ বৈবাণী শেষ নিশিতে উঠিয়া তিলক-চন্দন ফোটা কাটিয়াছেন, গায়ে হরিনামের মার্ক মারিয়াছেন। করতাল বাজাইয়া হবিনাম কবিতে কবিতে ভৈরববাবুর বৈঠকখানাব সম্মুখ হইয়া চলিয়া যাইতেছেন এবং তাহার কর্তব্য-কাৰ্য্য করিতেছেন দেখিলেন যে বাবু অন্দরমহল হইতে বাহির হইলেন। সঙ্গে সাত আটজন ভারী বাক ঘাডে করিয়া বাহির হইল । বাকের দুইদিকে তোড়া বোঝাই । দেখিতে অল্প, কিন্তু খুব ভারী। বাক বাহকের ঘাড়ে দুলিয়া পড়িয়াছে। দেউড়ির পরেই সদর দরজায় আসিলে আটজন দেশওয়ালী ঢাল-তরবারি বান্ধা, গোপে ত৷ দেওয়া বড় বড় পাগড়ি মাথায় বান্ধা—ভারীদিগকে মাঝে কবিয়া ছাতি ফুলাইয়া আগেপিছে চলিল। বাড়িব বাহিব হইলেই ভৈবববাবু বৈঠকখানায় আসিলেন। বৈরাগীও প্রভাতী গাইতে গাইতে অন্য আব এক বাডিতে চলিয়া গেল । সূর্যোদয় হইতে হইতে দেশওয়ালীব ভাবীসহ গ্রামের বাহির হইয়া রাস্তায় আসিয়া পড়িল। বৈরাগীও অন্য আর একপথ দিয়া তাহদের সঙ্গী হইল। দেশওয়ালীরা সকলেই বৈরাগীকে চিনিত। মনিব বাড়িতে প্রায়ই দেখিয়াছে। বিশেষ আসিবার সময়েও প্রভাতে প্রভাতী গাইতে শুনিয়াছে । রাম সিং জিজ্ঞাসা করিল—“ঠাকুর | এদিকে কোথায় যাওয়া হইবে ? বৈরাগী হঁটিতে হাটিতে—উত্তর করিতে কবিতে চলিল—“বাবাজি ! একবার ঝিনদর দিকে ভিক্ষায় যাইব ইচ্ছা আছে।” রাম সিং বলিল—“আচ্ছা আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই চল। এ-পথে একটু ঘুরা হইবে, তা হ’ক, একসঙ্গে সকলেই কথায়-বার্তায় যাইব ।” বৈরাগী বলিল—“বাবা! আমি ভিখারী, একমুষ্টি অন্নের জন্য দ্বারে দ্বারে