পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা २२टले আমরা তো জানিনা তোরাই তো জানালি, এমন সরল প্রেমে কেন গরল মাখালি”—ইত্যাদি— রাস্তার উভয়-পাশ্বস্থ গ্রামেই বৈরাগীর গলার আওয়াজ প্রবেশ করিল। ছোটবড় ছেলেমেয়ে কেহ অৰ্দ্ধবসন, কেহ শূন্ত-বসনে আসিয়া গাছতলায় যাইযা দাড়াইল । কিন্তু দশ বারজন লাল পাগড়িওয়ালা ঢাল-তরবার বান্ধ! সেপাই দেখিয়া একটু দূরে দাড়াইল। একেবাবে গা-ঘেষা হইয়া নিকটে আসিল না। দূরে দাড়াইয়া বৈবাগীব গান শুনিতে লাগিল। একটি গান শেষ হইতে না হইতেই রাম সিং, পাডে পুন: অন্তরোধ করিল, বাবাজি ! দোসর আর একটি গান হউক। খুব ভাল গান । বৈরাগীর অভিলাষ এখনও পূর্ণ হয় নাই । যে উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে গান এখনও তাহ সফল হয় নাই । মহাব্যস্ত হইযা চতুৰ্দ্দিকে চাহিতেছেন। ক্রমে গ্রামের অনেকে বটতলায় আসিয়া গান শুনিতে লাগিল । বৈরাগীও চারিদিকে তাকাইযা গান গাইতেছেন। তিনি যে মূখ দেখিতে ইচ্ছা করেন, সে মুখ দেখিতেছেন না। কাজে কাজে গানও থামিতেছে না । দেখিতে দেখিতে ঐ জনতার মধ্যে মনোমত রূপ দেখিলেন । তাহার উদ্দেশ্ব সফল হইল। তাড়াতাডি সে গানটি সাবিয়া নূতন-তালে আব একটি নূতন গান ধরিলেন— গান “তোমরা যা ও সবাই এখন ঘরে ফিরে রে ! আমি যাই বে, ওরে এসেছি এই ভবে এক, একা যেতে হল য়ে ।” —কেহই ফিরিয়া গেল না। একমনে বৈরাগীর গান শুনিতে লাগিল। তবে একজন ফকির ঐ গোলের মধ্যে দাডাইয়া গান শুনিতেছিল, সে তখনই চলিয়া গেল । আর দাডাইল না । ত্রস্তপদে জনতা ভেদ করিয়া রাস্তার বামপাশ্বে নামিয়া গ্রাম ধরিল। বৈরাগী দুই তিনবাব গানটি আওড়াইয়া যখন দেখিল ফকির সম্পূর্ণরূপে চক্ষের আডাল হইল—গানভঙ্গ দিয়া খনজনী ঝোলায় বন্ধ করিলেন । রাম সিং সঙ্গীদিগকে—বাহকদিগকে বলিতে লাগিল—“চল ভাই চল খুব ঠাগু হুয়, আবার চল, দেখি কত দূর যাইতে পারি।” ভাবীরা ভার ঘাড়ে ঝুলাইল। দেশওয়ালীরাও পূৰ্ব্বমত ভারীদিগের অগ্র-পশ্চাৎ যাইতে লাগিল । বৈরাগী বাবাজিও জোরে জোরে তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে যাইতে লাগিলেন ।