পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSo মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ গুণেই এই ব্যাপার সংঘটিত হইয়াছে। অতএব সে জল স্পর্শ না করিয়া দ্রুতপদে রাজমহিষীকে সংবাদ দিতে চলিল, এবং অশ্রত্যাগ করিতে করিতে কাতর বচনে বলিল, ঠাকুরানি ! সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত। রাজনন্দিনী স্নানার্থ কৃত্রিম হ্রদস্থ বারিস্পর্শ করিব মাত্র বানরী-রূপ ধারণ করিয়াছেন। রানী এই বাক্য শ্রবণ করিয়া প্রথমতঃ তাহকে ক্ষিপ্ত মনে করিয়াছিলেন। পরে যখন হ্রদের নিকটবৰ্ত্তিনী হইয়া দুহিতার দুরবস্থা স্বচক্ষে নিরীক্ষণ করিলেন, তখন শোকে হতজ্ঞান প্রায় হইলেন, এবং শিবে কবাঘাত করিতে কবিতে কন্যাকে ধরিবার নিমিত্ত যেমন হ্রদমধ্যে অবতরণ করিলেন, আপনিও একটি বৃদ্ধ বানী হইয়া চতুর্দিকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন । চতুর্দিক বানবীময় হইয়া উঠিল । রাজা সভাম গুপে বসিয়া অমাত্যবর্গ সমভিব্যাহাবে বিচার কবিতেছেন, এমন সময় চতুর দাসী রোদন-বদনে রাজ সভায় উপস্থিত হইয করপুটে নিবেদন করিল, ধৰ্শাবতাব ! ওদিকে সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত। রাজমহিষী, রাজকন্যা, এবং র্তাহার সখীগণ সকলেই বানবী হইয়াছেন । পুবীমধ্যে জনমানব নাই, কে ল বানরীদলে পরিপূর্ণ। মহারাজ ! শীঘ্ৰ চলুন, স্বচক্ষে দর্শন করিয়া উদ্ধারের উপায় করিবেন । রাজা এই পবমাশ্চর্য্য অদ্ভুতোক্তি শ্রবণমাত্র নিস্তব্ধ হইলেন। ক্ষণকাল পরে দাসীকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, চতুরে ! তুমি কি বলিতে ছ ? তোমার এরূপ ভাব কেন হইল ? বুদ্ধি স্থির কর । চতুরা পুনরায় করপুটে বলিল, মহারাজ ! আমার বুদ্ধির কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য হয় নাই। মহারাজের নয়নগোচর হইলেই সত্যাসত্য প্রকাশ হইবে । রাজা আর ধৈর্য্য ধারণ করিতে অসমর্থ হইয়া মস্তকে করাঘাত করিতে করিতে কন্যাস্তপুরমধ্যে গমন করিলেন । পুরী যেন জনশূন্ত বিজনবনসদৃশ বোধ হইতে লাগিল। যে রাজপুরী সৰ্ব্বদা আনন্দ ধ্বনিতে পূর্ণিত হইত, এইক্ষণে সেই পুরাতে অনিবার বানরধ্বনির প্রতিধ্বনি হইতেছে! ভূপতি ক্ৰমে ক্রমে দাসী সমভিব্যাহারে রাজকন্যার অবগাহনস্থানে উপস্থিত হইয়া সমস্ত অবলোকনাস্তর এককালে জ্ঞানশূন্য হইলেন। যেন তিনি কি অবনীমগুলে, কি শূন্ত মাগে, কি জাগরিত, কি নিদ্রিত, কিছুমাত্র স্থির করিতে পারিলেন না। মহিষীৰানরী মহারাজকে দর্শন করিয়া নেয়নীরে ভাসিতে লাগিলেন । রাজা কোন উপায় স্থির করিতে:ন। পারিয়া কেবল পুনঃ পুনঃ সেই বিপত্তারণ জগৎকারণ জগদীশ্বরকে স্মরণ করিতে