পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ 8 ર মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ দেবীপ্রসাদ বলিলেন—“নৌকা লাগাইয়! কি হইবে ? নৌকা লাগাইতে আমরা দিব না। আপনি দেখিতেছেন না ?” “কই আমি তো কিছুই দেখিতেছি না ! তোমরা কি আমাকে আগু বাডাইয লইতে আইস নাই?” তখন জামাইবাবুব মুখে কথা ফুটিল । স! গোলাম কর্কশভাবে বলিলেন,—“না, না, খাতির-তওয়াজা করিয়া লইতে আসি নাই। একেবাবে দূর কবিয তাডাইয়া দিতে আসিয়াছি। এ মাটি তোমার নয়, এ-ঘাট তোমার নয়, এ জমিদারী তোমার নয়, এ-বাড়িও তোমার নয়। বড় মীরসাহেব অভাবে সকলি তাহার কন্যাব—তোমার ইহাতে কোন স্বত্ব יי! 5ן: মীরসাহেব হাসিয়া বলিলেন— বাপু ! তুমি সুখে থাক! আমি চলিলাম । জলেব উপব থাকিয়া ও জামাইযের কথায় মীবসাহেব যেন দশহাত মাটিতে বসিয়া পড়িলেন । মাঝিদিগকে নৌকা ছাড়িয়া দিতে আদেশ কবিলেন । কোনদিকে যাইবেন, কোথায় যাইবেন কিছুই বলিলেন না । গৌরীস্রোতে নৌকা ভাসিয়া চলিল । সাওতার ঘাট ছাড়াইয়া ক্রমে চাপড়াগ্রামের সীমা ধরিল। তখন মীরসাহেব বলিলেন—‘ওরে কোথায় যাক্ট’ ? নৌকা লাগাইতে অনুমতি করিলেন—আর বলিলেন, "এপারেই থাকিব না । পাড়ি দিয়া ওপারে যাও । মাঝিরা ও নৌকার মুখ ফিরাইয়া দাড় ধরিল। অতি অল্প-সময়ের মধ্যেই নৌকা অপরপারে গিয়া চবে ঠেকিল । মীরসাহেব পৈতৃক-বাটি, জমিদারী ও জিনিসপত্র ইত্যাদি সমুদায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হইতে আজ সম্পূর্ণরূপে বেদখল হইলেন । র্তাহার চিরসাধের আশাতরী সোনারচাদ জামাই তরবারি হস্তে আজ গৌরী-গর্ভে ভাসাইয় দিয়া সুস্থির হইলেন। হাসিমুখে দলবলসহ বাটি আসিলেন আশা পূর্ণ হইল । কিন্তু চিস্তার ভাগ কিছু বেশী বোধ হইল । অন্য অন্য সকলেই আজিকার এই ঘটনায় মহা-দুঃখিত হইলেন । মীরসাহেব কাহারও নিকট এ-দুঃখ প্রকাশ কুরিলেন না। র্তাহার সেই পূৰ্ব্ব-সাহস, সেই পূৰ্ব্ব-বল, সেই পূৰ্ব্ব-আমোদ, পূৰ্ব্ব-ভাব, সকলি সমভাবে রহিয়া গেল। তিনি প্রায় ছমাস নৌকায় নৌকায় থাকিয়া নানা স্থান বেড়াইয়া নানা কারণে বাধ্য হইয় সাওতার অতি সংলগ্ন লাহিনীপাড়া গ্রামে মুন্সী জিনাতুল্লার কন্যা বিবি দৌলতননেসাকে বিবাহ করিলেন । আবার সংসারী হইলেন । ৯