পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা રહ્ય૭ প্রথম : নাহে—না ! ঈশ্বর আছেন। আর সারা হতে হবে না। আমরা তো আর স্ব-ইচ্ছায় নীল বুনিব না। আর কার সাধ্য আমাদের জমিতে জবরানে নীল-বোনে । সকলে একজোট থাকলে আর ভয় কি ভায়া ? যে ব্যাটা আমাদের জমিতে নীল-বুনতে কি চাষ দিতে আসবে ; সে বেটার মাথা আগে ভাঙ্গবো। প্রাণ দিব তবু নীল-বুনিব না। নীল-বুনিতে জমিও দিব না। চল । শীঘ্র শাস্ত্র চল ! পদ্মাপাড়ি দিয়া ওপারে যেতে পারলে বাচি। লাটসাহেবের মুখে ফুল-চন্দন পড়ক । আবে যেন আমাদিগকে পদ্মা পারে না আসিতে হয়। নানপথে, নানাকথা তুলিয়া প্রজাগণ হাসিখুশীতে যাইতেছে। কেহ নীলকরেব পিতৃমাতৃ শ্ৰাদ্ধ করিতেছে। কেহ মাজায় কাপড় বান্দিয়া বাহাদুরি জানাইয়া “নীল আর হবে না নীল আর হবে না" এই কথা চিৎকার করিয়া কহিতে কহিতে যাইতেছে। কথায় কথায় লাটসাহেবের খোসনাম গান গাইতেছে। সোনামুখীরই বা কত মুখ্যাতি করিতেছে। ঘটত্রিংশ তরঙ্গ বৈঠক প্রজাগণ মনেব আনন্দে হাসিখুশী করিতে করিতে গ্রামে আসিল । যাহারা বাড়িতে ছিল তাহারা এই সুখবর শুনিয়া মৃত শরীরে যেন জীবন সঞ্চার হইল। দুই হাত তুলিয়া লাটবাহাদুরের দীর্ঘজীবন ঈশ্বরের নিকট কামনা করিতে লাগিল। শ্ৰীশ্ৰীমতী মহারাণীর মঙ্গল কামনা করিয়া ঈশ্বরের নিকট কামনা করিতে লাগিল। মেয়েমহলেও হুলস্থূল পড়িয়া গেল। উলুউলুধ্বনিতে গ্রাম, পল্লী, পাড়া জাগিয়া উঠিল । “নীল আর হইবে না" এই কথা শুনিতেই বৃদ্ধ, যুবতী, এমনকি বালিকার প্রাণ পৰ্য্যস্ত আহলাদে আটখানা হইয়া গলিয়া পড়িল। আমীন, তাগাদগীর, পাইক-প্যাদার ভয়, স্ত্রীলোকদিগের মন হইতে অনেক তফাৎ হইল। কেনীর নামে প্রাণ র্কাপিত—শৰীর রোমাঞ্চিত হইত, আজ যেন আর সেরূপ হইল না। কুঠির নামে মুখ, বুক শুকাইয়া হৃদয়ের বৃক্ত জল হইয়া যাইত, প্রাণ ধরফড় করিত, তাহাও যেন আর হইল না। লাটবাহাদুরের হুকুম, নীল আর হইবে না । মুখে মুখে কথা সংক্ষেপ—ক্রমেই সংক্ষেপ— শেষে এই পর্যন্ত দাড়াইল যে লাটবাহাদুরের হুকুম, “নীল আর হবে না”।