পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথ। ২৩৭ গ্রামের কোন প্রজাকে ধরিয়া লইতে আসিল । সে কুড়ি পঁচিশ জন সর্দারের হাত হইতে রক্ষা পাওয়া এক একজনের সাধ্য নহে। আত্মীয়স্বজন, ভাই-বেরাদর কতই আছে যে, তাহারা সকলে একত্র হইয! সে দুরন্ত ডাকাতদিগের হস্ত হইতে বাড়ির কৰ্ত্তাকে রক্ষা করে। পাড়া প্রতিবেশী, আবশ্বক বোধ করিলে—গ্রামের লোক চেষ্টা করিলে, কথার কথা—রামনাথ ম গুলকে বক্ষা করিতে পারে। কিন্তু রামনাথ একী কিছুই করিতে পারে না । খুব বিবেচনা কর, দেখ, নীলকব কসাইয়ের হস্ত হইতে বাঙলার গরুগুলা বৃক্ষ করিতে হইলে এক একজনে কিছুতেই আটিয়া উঠিতে পাবিবে না। তাহাতেই বলিতেছি আমবা নিজেবা নিজেকে বক্ষা করিতে অক্ষম । কাজেই সকলকে, সকলের আপদবিপদে সাহায্য করা কৰ্ত্তব্য । এক জনের প্রতি নীলবানবে লঙ্কা পোড়াইবাব উপক্রম করিলে—আর কিছু নয় শুধু খুখু দিয়া সে আগুন নিবাইয়া দেওয়া সকলেব উচিত । যে বিপদই কেন হউক না, একের মাথায ষোল আন ভর পড়িলে সে কিছুতেই বাচিবে না। মাজা দমিয়া যাইবে, হয়ত একেবারে সারা হইতে পারে। আব সেই বিপদভার অমর সকলে যদি তিল তিল করিয়া বঁটিয়া লই তাছা হইলে কি হয় ? ভাইসকল ! বল দেখি তাহাতে কি আমব মীরা পডি ? অামাদের কিছুই হয না । বিপদ বলিয়া একটি কথা ঘুর্ণাক্ষরেও মনে ধাবণ হয় না । শক্রব মুখেও ছাই পড়ে । কারণ যত বিপদ চাপাইবে ঈশ্বর ইচ্ছায তিল তিল হইযা কোথায় উড়িযা যাইবে । কোন পরমাতুর সঙ্গে মিশিয়া কোথায় সংযোগ হইবে, তাহার সন্ধানই থাকিবে না । পরাস্তই বলক্ষয়। এইরূপ ক্রমে বলক্ষয় হইলে কেনী কয়দিন নীলকাৰ্য্য চালাইবে, কয়দিন শালঘর মধুয়ায় বসিয়া রাজত্ব করিতে পরিবে ? লজ্জায়, অপমানে, দায়ে শেষে আমাদের সহিত অপস-মীমাংসা করিযা যাহাতে উভয়কূল রক্ষা পায় তাহার কোন উপায় অবশ্যই করিবে, আমরাও তাঁহাতে সম্মত হইব। আমি এক্ষণে আমার মনের কথা বলিতেছি যে, ঐ উচ্চ বেদীর উপবে পৃথক পৃথক স্থানে তাম, তুলসী, এবং কোরণ রাখা হইয়াছে, যাঙ্গতে যাহাব ভক্তি তিনি অপেন আপন বিশ্বাস ও ধৰ্ম্মতঃ ঐ সকল পবিত্র জিনিসকে সরলচিত্তে মহাপবিত্র জ্ঞান করিয়া ধৰ্ম্মত: প্রতিজ্ঞাপূর্বক অকপটচিত্তে একথা বলুন যে, আমরা আপদে বিপদে সকলকে সাহায্য করিব। একের বিপদ অন্যে আপন বিপদ জ্ঞান করিয়া মাথায় করিয়া লইব । নিজ বিপদ জ্ঞানে যথাসাধ্য উদ্ধারের চেষ্টা কবিব ! অপারগ হইলে সকলে একত্রে রাজদ্বারে প্রার্থণা করিব।”