পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রত্ববতী SR রাজা পুনরায় বলিলেন, ঠাকুর । আমাকে হতাশ করিবেন না। স্বমস্ত মহারাজকে অশেষপ্রকার প্রবোধবাক্যে বুঝাইয়া গমনে উদ্যত হইলেন। রাজা তখন কোষাধ্যক্ষকে আহবানপূর্বক আজ্ঞা করিলেন, ইহাকে একশত স্বর্ণমুদ্রা প্রদান কর । স্বমস্ত কহিলেন, মহারাজ ! স্বর্ণমুদ্রা দূরে থাকুক, এক তাম্রমুদ্রাও গ্রহণ করিব না। যখন এ দারুণ বিপদ হইতে মুক্তলাভ করিবেন, সে সময়ে অনুগ্রহ করিয়া যাহা প্রদান করেন, শিরোধার্য্য করিয়া লইব । সুমস্তুের এরূপ সৌজন্য দর্শন করিয়া সভাস্থ সভ্যগণ একবাক্যে র্তাহার অগণ্য প্রশংসা করিতে লাগিলেন । মন্ত্রী করযোডে বলিলেন, মহারাজ ! জগদীশ্বর মানবজাতিকে ঘোরতর বিপদে নিক্ষেপ করেন, আবার তিনিই তাহার মুক্তিপথ প্রকাশ করিয়া দেন। বিবেচনা করুন, এই ব্রাহ্মণ হঠাৎ কোথা হইতে আসিয়া অব্যক্ত সমুদায় বিষয় প্রকাশ করিলেন। অতএব তিনি যে সন্ন্যাসীর আগমনের কথা কহিয়াছেন, তাহ। অবগুই সত্য হইবে। মহারাজ ! ধৈৰ্য্যাবলম্বন করিয়া অন্তরের চিন্তা অন্তর করুন। এদিকে স্বৰ্য্য অস্ত হইল। নিশানাথ সহচরগণে বেষ্টিত হইয়া জনগণের মনোবঞ্জন করিতে করিতে পূৰ্ব্বদিক হইতে উদিত হইলেন। ভূপতি সমস্ত রাত্রি চঞ্চলভাবে জাগিয়া কাটাইলেন। নিদ্র মহারাজের দুঃখে দুঃখিত হইয়া ক্ষণকালের জন্তও তাহার নেত্রাসনে উপবেশন করিলেন না । দুঃখের রজনী এত দীর্ঘ যে, কোনমতেই অবসান হইতে চাহে না, মহারাজ ক্ষণে ক্ষণে নিদিষ্ট নক্ষত্র দশন করিয়া নিশার শেষ বিবেচনা করেন । কিন্তু মন কোনরূপেই সুস্থির থাকে না । একবার বোধ করেন যেন, তমোনাশিনী উষা পূৰ্ব্বদিক হইতে আগমন করিল, আবার কিয়ৎক্ষণ পরে তাহার কিছুই দৃষ্ট হয় না। একবার বিবেচনা হয় যেন, বিহঙ্গমগণ স্ব স্ব বুলায়ে বসিয়া সুমধুরস্বরে জগদীশ্বরের গুণগান করিয়া উঠিল। আবার ক্ষণকালের পরে সেভাবের কিছু থাকে না। রাজা এইরূপে চঞ্চল হইতেছেন, এমন সময়ে বিহগনিচয় দিনপতির আগমনবার্তা উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করিতে লাগিল। ভূপতি বিহঙ্গমুখে এতদবাৰ্ত্ত শ্রবণে মহাহৰ্ষচিত্তে সঙ্গিগণকে বলিলেন, আর বিলম্বে কাজ নাই ; রজনী শেষ হইল। ইহাদের মুক্তির চেষ্টা পাওয় কৰ্ত্তব্য। এদিকে মিশাপতি আগমনকাল নিকটবৰ্ত্তী জানিয়া চারুবর্ণ লুকায়িত করিতে লাগিলেন। আগমনকাল নিকটবর্তী বটে, কিন্তু এ আগমন কাহার ? দিনপতির ?