পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকেৰ মনের কথা ૨or ગ হইয়া, গতকল্য যাহা ছিল, তাহাও আজি নাই । সে বি-ফারিতলোচনে খরতর জ্যোতির অভাব যে পরিমাণ কাল দেখিয়াছিলেন, আজ তাহার কিছুই নাই । সরল নাসিক বামে কিঞ্চিৎ হেলিয়াছে, চক্ষের জলে চিবুকদ্বয় ভাসিয়া যাইতেছে। জ্যৈষ্ঠপুত্র মায়ের পদতলে মাথা রাখিয়া মায়ের পা দুখানি জড়াইয়া ধরিয়া কান্দিতেছে। মধ্যম পুত্রের বয়স দশ এগার বৎসর, সেও যে কিছু না বুঝিতেছে তাহ নহে। মায়ের বক্ষে মাথা রাখিয়া সজল নয়নে মায়ের মুখপানে চাহিয়৷ রহিয়াছে। আর দুটিপুত্র তাহারা অতি শিশু, তাহারা সেখানে নাই। স্থানাস্তরে দাসীদিগের তত্ত্বাবধানে বহিয়াছে। কিন্তু সময় সমঘ তাহীদের কান্নার রব ও শুনা যাইতেছে । মীরসাহেব ! অনেকক্ষ৭ সহধৰ্ম্মিণীর মুখপানে চাহিয়৷ জিজ্ঞাসা করিলেন। কেমন বোধ হয় ? দৌলতননেসা কোন উত্তর কবিলেন না । দক্ষিণহস্ত উঠাইয়া ঈশ্বর উদ্দেশ্যে মাত্র তর্জনী উত্তোলন করিম দেখাইলেন । কোন কথা স্বামীকে বলিলেন না । অধিকন্তু বস্ত্র দ্বারা আপন মুখ ঢাকিয় ফেলিলেন। স্বামীর পদ দুখানি দুইহাতে ধরিয়া অফুটম্বরে কি বলিলেন, তাহ অপর কেহই বুঝিতে পারিল না । মীরসাহেব কিছুতেই তিষ্ঠিতে পাবিলেন না । নীরবে ক্ৰন্দন করিতে করিতে ঘরেব বাহির হইলেন । কোনদিন কোনলোকে যে চক্ষে কখনই কোন কারণে জল দেখে নাই, তাহারা আজি মীরসাহেবের চক্ষে অবিশ্রাস্ত জলধারা পতন দেখিল । ফাখেরাখাতুন অন্য ঘরে মুত্তিক শয্যায় অজ্ঞান । কখন সচেতন, কখন দৌড়িয়া কন্যার নিকটে আসিতেছেন। কখনও কন্যার পাশ্বে কন্যাকে জড়াইয়! ধরিয়া অপরকে বলিতেছেন—হায় ! তোমরা এঘর হইতে চলিয়া যাও । আমি মাকে ক্রোড়ে করিয়া থাকিব। দেখিব কে আমার মাকে কোথায় লইয়া বায় ? আবার কোল ছাড়িয়া উঠিতেছেন। দৌহিত্রদ্বয়ের মুখপানে চাহিয়া হু হু শব্দে ক্ৰন্দন করিতে করিতে অচৈতন্য হইতেছেন । দৌলতননেসা মুখের বস্ত্র সরাইয়া ইঙ্গিতে জ্যেষ্ঠপুত্রকে ডাকিলেন। দুইহস্তে দুইপুত্রের মুখে, মাথায় হস্তদিয়া অস্ফুটস্বরে কয়েকটি কথা কহিয়া দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিলেন। জ্যেষ্ঠপুত্র মায়ের মুখে চামুচে করিয়া সরবত দিতে লাগিলেন। দুই-একঢোক গিলিয়া আর গলাধ হইল না! গও বাহিয়া সরবত পড়িতে 〉?