পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১০৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

হইতে নানাবিধ প্রস্তরাদি আনীত হইয়া প্রাসাদের সৌন্দর্যবৃদ্ধির চেষ্টা করা হইয়াছিল। প্রাসাদ সাধারণতঃ ইষ্টকে নির্মিত হয়। কিন্তু স্থানে স্থানে প্রস্তর বসাইয়া সিরাজ তাহাকে শোভাশালী করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। প্রাসাদের তরঙ্গায়িত পলগুলি কার্ণিসের অপরিসীম সৌন্দর্য বিস্তার করিত। ভিন্ন ভিন্ন চত্বরে প্রাসাদটি বিভক্ত হয়, অথবা এক-একটি পৃথকৃ চত্বরই এক-একটি বিভিন্ন প্রাসাদে পরিণত হয়। কোনটি এম্‌তাজ মহাল, কোনটি বা রঙ্গমহল প্রভৃতি নামে অভিহিত হইত। সেই সুন্দর প্রাসাদ এতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল যে, কাহারও কাহারও মতে তাহাতে তিনটি ইউরোপীয় নরপতি অনায়াসে বাস করিতে পারিতেন।[]

 প্রাসাদের প্রান্তদেশে একটি কৃত্রিম ঝিল খনন করিয়া, তাহাকে হীরাঝিল নাম প্রদান করা হইয়াছিল। সম্ভবতঃ নওয়াজেস্‌ মহম্মদ খাঁর মোতিঝিলের অনুকরণে সিরাজের হীরাঝিল হইয়া থাকিবে। ঝিলের উভয় পার্শ্ব ইষ্টকদ্বারা বাঁধান হয়। এই সুচারু প্রাসাদের নির্মাণ শেষ হওয়ার পূর্বে সিরাজ মাতামহ আলিবর্দী খাঁকে প্রাসাদ-দর্শনের জন্য নিমন্ত্ৰণ করিয়া পাঠান। বৃদ্ধ নবাবের সহিত অনেক কর্মচারী, রাজা, জমিদার ও জমিদারদিগের প্রতিনিধিগণও ভাবী নবাবের সুরম্য প্রাসাদ দেখিতে অগ্রসর হইলেন। নবাব আলিবর্দী খাঁ প্রাসাদ দেখিয়া অত্যন্ত চমৎকৃত হন। তাঁহার অনুচরবর্গও বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া, সিরাজের রুচির ভূয়সী প্রশংসা করিতে থাকেন। কেহ বা ভিন্ন ভিন্ন চত্বরের, কেহ বা সুরম্য কক্ষশ্রেণীর, কেহ বা পলতোলা কার্নিসের এবং কেহ বা হীরাঝিলের প্রশংসায় সিরাজের বালসুলভ চঞ্চল অন্তরকে অধিকতর স্ফীত করিয়া তুলেন। যখন সকলে ভিন্ন ভিন্ন চত্বরে বা প্রকোষ্ঠে পরিভ্রমণ করিতেছিলেন সেই সময় বৃদ্ধ নবাব কোন একটি প্রকোষ্ঠমধ্যে প্রবিষ্ট হইলে, সিরাজ মাতামহের সহিত কৌতুকচ্ছলে তাঁহাকে সেই প্রকোষ্ঠমধ্যে বদ্ধ করিয়া রাখিলেন। নবাব দৌহিত্রের রহস্য বুঝিতে পারিয়া বলিলেন যে, আজ তোমারই জয় হইয়াছে, এক্ষণে তোমাকে কি উপহার দিলে আমাকে মুক্ত করিয়া দিবে? সিরাজও হাসিতে হাসিতে উত্তর করিলেন যে, আমার প্রাসাদের জন্য কোন বন্দোবস্ত না করিলে, ইহার নির্মাণ শেষ ও সৌন্দর্য রক্ষা হইবে না। তজ্জন্য ইহার কোনরূপ উপায় বিধান করিতে হইবে।

 নবাবের প্রকোষ্ঠমধ্যে রুদ্ধ হওয়ার কথা শুনিয়া, ভিন্ন ভিন্ন স্থান হইতে তাঁহার সমস্ত অনুচরবগ আসিয়া তথায় উপস্থিত হইলেন। সিরাজ তাঁহাদিগকে দেখিয়া বলিলেন যে, এই সকল জমিদার ও জমিদারদিগের প্রতিনিধির নিকট হইতে একটি

  1. "That palace which was on other side of the Bagratty and contained lodgings enough for three. European Kings is now ruined.” Mutaqherin Trans., Vol. II, p. 28. Note. ইহা একজন ইউরোপীয়ের উক্তি, মুতাক্ষরীনের অনুবাদক একজন ফরাসী ছিলেন, পরে ইনি মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত হন।