পারিতেন, তাহা হইলে তাঁহাদিগকে আর তাহার অংশ পাইতে হইত না; সমস্তই সেই ব্রিটিশপুঙ্গবের হস্তগত হইত। মীরজাফরের নিকট হইতে ইংরেজেরা ৩,৩৮,৮৫,৭৫০ টাকা লাভ করেন। কিন্তু একবারে সমস্ত টাকা দেওয়া হয় নাই; ঐ টাকার অধিকাংশ সিরাজের প্রকাশ্য ভাণ্ডার হইতে দেওয়া হয়। কথিত আছে যে, ধনাগার উন্মুক্ত হইবামাত্র তাহা হইতে ৮০ লক্ষ টাকা নৌকাযোগে কলিকাতায় রওনা হইয়াছিল।[১] ইংরেজসাধারণের প্রাপ্য অর্থ হইতে এক ক্লাইব সাহেবই ২৩ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা লাভ করিয়াছিলেন। এইরূপে সিরাজের সমস্ত সম্পত্তি বিভক্ত হইয়া যায়। সিরাজের প্রাসাদ ধনে পরিপূর্ণ থাকায় বর্তমান সময় পর্যন্ত এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভগ্নাবশিষ্ট প্রাসাদের মধ্যে অনুসন্ধান করিলে এখনও অনেক অর্থ পাওয়া যাইতে পারে।
মীরজাফর সিংহাসনে আরোহণ করিয়া প্রথমে হীরাঝিলের প্রাসাদেই বাস করিয়াছিলেন। কিন্তু তথায় তিনি অধিক কাল বাস করেন নাই; কিছুকাল পরে, ভাগীরথীর পূর্বতীরে কেল্লামধ্যে আলিবর্দীর প্রাসাদে[২] আসিয়া বাস করেন। নবাব হওয়ার পূর্বে জাফরগঞ্জের প্রাসাদ তাহার আবাস-স্থান ছিল; কিন্তু মসনদে উপবেশন করার পর, স্বীয় জ্যেষ্ঠপুত্র মীরণকে জাফরগঞ্জের প্রাসাদ দান করা হয়। মীরণের বংশধরেরা অদ্যাপি তথায় বাস করিতেছেন। মীরণের বংশধরেরা জাফরগঞ্জের প্রাসাদ অধিকার করায়, নূতন নবাব আর তথায় গমন করেন নাই। তিনি মুর্শিদাবাদকেল্লার মধ্যস্থিত আলিবর্দীর প্রাসাদে আসিয়াই বাস করেন।
গবর্নর ভান্সিটার্ট মীরজাফরকে পদচ্যুত করিয়া, মীরকাসেমকে মসনদ প্রদান করেন। ভান্সিটার্ট মীরজাফরকে হীরাঝিলের প্রাসাদে বাস করিবার জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন।[৩] কিন্তু মীরজাফর তাহাতে সম্মত না হইয়া, স্বীয় প্রিয়তমা ভার্যা মণি বেগমের সহিত কলিকাতায় আসিয়া চিৎপুরে বাস করেন।
মীর কাসেমের সহিত যখন ইংরেজদিগের বিবাদ আরম্ভ হয়, সেই সময়ে মীর কাসেম জগৎশেঠদিগকে ইংরেজদেগের পক্ষপাতী জানিয়া, তাহাদিগকে বন্দী করিয়া মুঙ্গেরে পাঠাইবার জন্য বীরভূমের ফৌজদার মহম্মদ তকী খাঁকে আদেশ দেন। মহম্মদ তকী খাঁ শেঠদিগকে প্রথমত হীরাঝিলের প্রাসাদে বন্দী করিয়া রাখেন। পরে মুঙ্গের হইতে নবাবের প্রেরিত লোক উপস্থিত হইলে, তাহাদের হস্তে তাঁহাদিগকে সমর্পণ করেন।
ইহার পর হইতে আর হীরাঝিল সম্বন্ধে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ দেখা যায় না। এক্ষণে সে প্রাসাদ কালগর্ভে অন্তর্হিত। মীরজাফরের সময় হইতেই তাহা