প্রকৃত যুদ্ধ ঘটে নাই; ইংরেজরা একরূপ বিনাযুদ্ধেই পলাশীতে জয়লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই জয়লাভে তাহাদিগকে জগতের মধ্যে অজেয় করিয়া তুলিয়াছে। এই বিজয়ের কারণ, কেবল বিশ্বাসঘাতকদিগের ষড়যন্ত্র ও সিরাজউদ্দৌলার কাপুরুষতা! যদি নবাবের সেনাপতিগণ স্ব স্ব কর্তব্য পালন করিতেন, অথবা মীরমদনের পতনের পর সিরাজ মোহনলালের সহিত নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতেন, তাহা হইলে উত্তালতরঙ্গাকুল মহাসমুদ্রপ্রায় নবাবসৈন্যের নিকট মুষ্টিমেয় ইংরেজ তৃণগুচ্ছ যে। কোথায় ভাসিয়া যাইত, তাহা বলিতে পারা যায় না।
কোন নিরপেক্ষ ইংরেজ ঐতিহাসিক এই পলাশীযুদ্ধ সম্বন্ধে নিম্নলিখিতরূপ মত প্রকাশ করিয়াছেন। “বাস্তবিক ফলবিষয়ে পলাশীবিজয়ের ন্যায় বিজয়লাভ আর কখনও হয় নাই। কিন্তু যুদ্ধের কথা ভাবিলে, আমার মতে তাহাতে গৌরবের বিষয় কিছুই নাই। প্রথমতঃ সে যুদ্ধ ন্যায়সঙ্গত হয় নাই। সিরাজউদ্দৌলার তিন জন প্রধান সেনাপতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করিত, তাহা হইলে, পলাশীযুদ্ধে কখনই জয়লাভ হইত না। মীরমদন খাঁর মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত ইংরেজের অগ্রসর হইতে পারেন নাই; প্রত্যুত পশ্চাৎপদ হইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। নবাবসৈন্য যদি বিশ্বস্ত ও রাজভক্ত ব্যক্তিগণের দ্বারা চালিত হইয়া, স্বস্থানে অবস্থিতিমাত্র করিত, তাহা হইলে ইংরেজের। তাহাদের কিছুই করিতে পারিতেন না। ফরাসী গোলন্দাজদিগের অভিমুখে অগ্রসর হইলেই ইংরেজসৈন্যের দক্ষিণ পার্শ্ব ৪০ সহস্র বিপক্ষ সেনার সম্মুখে পড়িত। অতএব সে কথা মনে স্থান পাইবার যোগ্য নহে। কেবল বিশ্বাসঘাতকতার দ্বারাই কার্যসিদ্ধি হইয়াছিল। যখন সেনাপতিগণের বিস্বাসঘাতকতাবশতঃ নবাব যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিলেন, যখন সেই বিশ্বাসঘাতকতা নবাবসৈন্যগণকে তাহাদের সুরক্ষিত অবস্থান হইতে অপসারিত করিল, তখনই ক্লাইব সসৈন্যে বিধ্বস্ত হইবার আশঙ্কা না করিয়া অগ্রসর হইয়াছিলেন। অতএব পলাশীতে যদিও নিঃসংশয়রূপে বিজয়লাভ হইয়াছিল, তথাপি ইহাকে একটি মহাযুদ্ধ বলা যাইতে পারে না।”
[১] তাহার পর, ইংরেজের সিরাজের সহিত যেরূপ সাধুজনবিগহিত ব্যবহার করিয়া
- ↑ "Yes! As a victory, Plassey was, in its consequences perhaps the greatest ever gained. But as a battle, it is not in my opinion, a matter to be very proud of. In the first place, it was not a fair fight. Who can doubt that if the three principal generals of Sirazu'd daulah had been faithful to their master, Plassey would not have been won? Up to the time of the death of Mir Mudin Khan the English had made no progress; they had even been forced to retire. They could have made no impression on their enemy had the Nuwab's army, led by men loyal to their master, simply maintained their position. An advance against the French guns meant an exposure of their right flank to some 40,000 men. It was not to be thought representatives, about three months after the execution of the former treaty, to determine 'by the blessing of God,' upon dispossessing the Nabob Serjah al Dowlah of his Nizamut, and giving it to another.” (Bolt's consideration, p. 40.)