উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দুইটি গুটি বা প্রহরীদিগের বাসস্থান। প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়া তাহার শীর্ষোপরি উঠিতে পারা যায়; দ্বারের মস্তকে একটি নাতিপ্রশস্ত চাতাল; এই চাতালে দাড়াইয়া ভাগীরথীর তরঙ্গলীলা ও পরপিরস্থিত বর্তমান মুর্শিদাবাদ নগরের সুন্দরদৃশ্য নয়নপথে পতিত হইয়া থাকে। প্রবেশদ্বার অতিক্রম করিয়া, প্রথম চত্বরে পদার্পণ করিতে হয়; চত্বরটি আম প্রভৃতি বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষ ও নানাবিধ পুষ্পবৃক্ষে পরিপূর্ণ। চত্বরের মধ্যস্থলে একটি প্রাচীরবেষ্টিত উন্মুক্ত স্থল; তাহাতে তিনটি সমাধি রক্ষিত হইয়াছে। উক্ত চত্বরমধ্যে পূর্ব দিকের দ্বারের নিকট আলিবর্দী খাঁর মাতা চিরনিদ্রায় অভিভূত আছেন। আলিবর্দী খাঁ তাহাকেই সমাহিত করিবার জন্য প্রথমে এই সুন্দর বৃক্ষবাটিক নির্মাণ করেন।
এই প্রাচীরবেষ্টিত সমাধিস্থানটির উত্তর দিকে একটি উচ্চ স্থানে ১৭টি সমাধি দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার কোন-কোনটিতে ফারসী অক্ষর খোদিত আছে। পূর্ব দ্বার হইতে পশ্চিম চত্বরে প্রবেশ করিবার দ্বারের নিকট দক্ষিণ দিকে এবং পূর্ব চত্বরমধ্যেই আরও তিনটি সমাধি দৃষ্ট হয়। পূর্ব চত্বর ও পশ্চিম চত্বরের মধ্যস্থ প্রবেশদ্বার অতিক্রম করিয়া, পশ্চিম চত্বরে প্রবেশ করিলে, সম্মুখে একটি সমাধিগৃহ দৃষ্ট হইয়া থাকে; সেই সমাধিগৃহে গমন করিবার পথের দক্ষিণ দিকে উন্মুক্ত স্থলে দ্বার হইতে প্রথমতঃ তিনটি সমাধি দেখিতে পাওয়া যায়। এই সমাধি তিনটি আলিবর্দীবংশীয়দিগের কোন কোন কর্মচারীর সমাধি বলিয়া কথিত হয়। সমাধিগৃহটি বর্গক্ষেত্র, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে প্রায় ২১ হস্ত হইবে। গৃহের চারি পার্শ্বে চারিটি বারাণ্ডা; এই বারাণ্ডার চারি পার্শ্বেও চারিটি অপ্রশস্ত রোয়াক আছে। গৃহের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকেই তিনটি করিয়া দ্বার; কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ দিকে এক-একটি দ্বার ও দুই-দুইটি জানালা রহিয়াছে। সমাধিগৃহাভ্যন্তরে সর্বশুদ্ধ ৭টি সমাধি আছে। মধ্যস্থলে শ্বেত ও কৃষ্ণবর্ণ প্রস্তরখণ্ডমণ্ডিত সমাধিতলে বাঙ্গলার আদর্শ নবাব আলিবর্দী খাঁ শায়িত আছেন। আফগান ও মহারাষ্ট্রীয়গণের অবিশ্রান্ত আক্রমণে ব্যাকুল হইয়া, যখন মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত সন্ধিস্থাপনপূর্বক তিনি কিছুদিনের জন্য শান্তিলাভের প্রয়াসী হইয়াছিলেন, সেই সময়ে তাহার পরিবারমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটিতে আরম্ভ হয়। তাহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা হাজী আহম্মদ এবং ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাতা জৈনুদ্দীন ইতিপূর্বেই আফগান হস্তে প্রাণবিসর্জন দিয়াছিলেন। তাহার পর নওয়াজের মহম্মদ খাঁ ও তাঁহার দ্বিতীয় ভ্রাতা সৈয়দ আহম্মদ খাও একে একে সংসার হইতে বিদায়গ্রহণ করিলেন।
এই সমস্ত কারণে বৃদ্ধ নবাবের হৃদয়ের শাস্তি দূরে পলায়ন করিল; কমে কমে তাহার স্বাস্থ্যভঙ্গ হইতে আরম্ভ হইল। হিজরী ১১৬৯ অব্দের জমাদিয়ল আউয়ল মাসের ৯ই হইতে তিনি শোথরোগে আক্রান্ত হইয়া পড়িলেন। নবাব প্রথমতঃ জলপান পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। কিন্তু যখন বুঝিতে পারিলেন যে, তাহার ন্যায় বৃদ্ধ বয়সে এই ভীষণ রোগের হস্ত হইতে নিষ্কৃতির কিছুমাত্র সম্ভাবনা নাই, তখন হইতে
