পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
খোশ্‌বাগ
১৫১

হইত এবং সমাধিগৃহে উত্তমরূপে প্রদীপ জ্বালিত হইত। এক্ষণে আর সে-সকল বন্ধ দেখিতে পাওয়া যায় না। শুনা যায়, বিশেষ বিশেষ পর্বোপলক্ষে শতছিন্ন সেই পুরাতন বস্ত্রগুলি ব্যবহৃত হইয়া থাকে। সমাধিগৃহে দীপ জ্বালিবার জন্য এক্ষণে মাসে চারি আনা মাত্র তৈলের ব্যবস্থা হইয়া থাকে। বিশেষ বিশেষ পর্বোপলক্ষে সমাধিগুলির উপর মিষ্টান্নাদিও নিক্ষিপ্ত হইয়া থাকে।

 খোশ্‌বাগের সমাধিভবনের কথা অনেকানেক ইউরোপীয় প্রশংসার সহিত উল্লেখ করিয়াছেন। হজে সাহেবের ভারত-ভ্রমণে ইহার উল্লেখ আছে।[১] ১৭৮২ খ্রীঃ অব্দে ফস্টার নামে কোন ইংরেজ খোশ্‌বাগে উপস্থিত হইয়৷ লুংফ উন্নেসাকে সিরাজের জন্য শোক প্রকাশ করিতে দেখিয়াছিলেন। বহরমপুরের একজিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার কাপ্তেন লেয়ার্ড খোশ্‌বাগের এক সুন্দর বিবরণ লিখিয়াছিলেন। তাহার সময়ে খোশ্‌বাগের প্রবেশদ্বারের সম্মুখে একটি বাঁধাঘাটের চিহ্ন ছিল, সে চিহ্ন অনেক দিন পর্যন্ত দেখিতে পাওয়া যাইত, এক্ষণে তাহা ভূগর্ভে প্রোথিত। লেয়ার্ড খোশ্‌বাগের প্রাচীরে বন্দুক ছাড়িবার ছিদ্র দেখিয়াছিলেন। এক্ষণে সে প্রাচীরের নূতন সংস্কার হইয়াছে। তিনি সমাধিভবনের বৃক্ষশ্রেণীর ও কুসুম-কাননের অনেক প্রশংসা ও সমাধির আচ্ছাদন কৃষ্ণবর্ণ বস্ত্রাদিরও উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। খোশ্‌বাগের উদ্যানটি অনেকটা সেই রূপই আছে; কিন্তু সমাধির জন্য যেরূপ ব্যবস্থা ছিল, এক্ষণে তাহার কিছুই নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। মধ্যে মধ্যে খোশ্‌বাগের সংস্কার হইয়া থাকে। সম্প্রতি সুন্দররূপে সংস্কার করায়, মুর্শিদাবাদের মধ্যে ইহা একটি রমণীয় দৃশ্য হইয়া উঠিয়াছে। ছায়াতরঙ্গের লীলাভূমি এই রমণীয় সমাধিকাননে উপস্থিত হইলে, হৃদয়ে কেমন এক অনির্বচনীয় ভাবের উদয় হয়। আলিবর্দী ও সিরাজের সমাধি আজিও শ্মশান মুর্শিদাবাদ হইতে লয় পায় নাই, ইহাও কিয়ৎ-পরিমাণে আশ্চর্যের বিষয় বলিতে হইবে।

  1. Hodges' Travel in India, p. 11