মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ সীমার শেষ প্রান্তে অবস্থিত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিলেন।[১] কিন্তু মুতাক্ষরীনকার মীরজাফরের জাফরাগঞ্জে বাস করার কথা লিখিয়াছেন। অর্মে মীরজাফরের প্রাসাদকে যখন হীরাঝিলের পরপারে বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন, তখন তাহা জাফরাগঞ্জেই অবস্থিত বুঝা যাইতেছে। জাফরাগঞ্জ অষ্টাদশ শতাব্দীর মুশি'দাবাদের মধ্যস্থলেই ছিল দক্ষিণ সীমার শেষ প্রান্তে নহে। রেনেলের কাশীমবাজার। দ্বীপের মানচিত্রে অষ্টাদশ শতাব্দীর মুর্শিদাবাদকে ভাগীরথীর পূর্ব তীরে মোতিঝিলের উত্তর হইতে সাধকবাগ পর্যন্ত ও পশ্চিম তীরে খোশ্বাগ হইতে বড়নগরের নিকট পর্যন্ত বিস্তৃত করিয়া অঙ্কিত করা হইয়াছে। সুতরাং তৎকালে জাফরাগঞ্জ যে মুর্শিদাবাদের মধ্যস্থলেই ছিল, তাহাতে সন্দেহ করার কোনই কারণ নাই এবং মীরজাফর যে জাফরাগঞ্জেই বাস করিতেন, তাহাও স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে।
পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই সিরাজের হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়। কেবল তাহাই নহে, পলাশীযুদ্ধের পূর্বে ইংরেজদিগের যে গুপ্তসন্ধি হয়, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই মীরজাফর শপথপূর্বক তাহা প্রতিপালন করিতে স্বীকৃত হন। কাশীমবাজার কুঠির অধ্যক্ষ ওয়াট্সসাহেব সিরাজের ভয়ে স্ত্রীলোকদিগের বহুনোপযোগী আবৃত শিবিকায় আরোহণ করিয়া, একেবারে জাফরাগঞ্জের প্রাসাদের অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করেন। মীরজাফর ও মীরণ তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়া, একটি কক্ষমধ্যে লইয়া যান; তথায় মীরজাফর ইংরেজদিগকে সাহায্য করিতে প্রতিশ্রুত হন। সিরাজ মুর্শিদাবাদ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করিলে, মীরজাফর সিরাজের প্রাসাদ আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদিগকে সাহায্য ও সিরাজকে বন্দী করিয়া তাহাদের হস্তে অর্পণ করিতে প্রতিজ্ঞা করেন। পরে কোরান ও মীরণের মস্তক স্পর্শ করিয়া, সন্ধির সমস্ত শর্ত পালন করিতে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন।[২] তাহার পর পলাশীর যুদ্ধশেষে সিরাজ রাজমহলের নিকট হইতে ধৃত হইয়া মুর্শিদাবাদে নীত হইলে, জাফরাগঞ্জের প্রাসাদেই হত হন।[৩] যে-গৃহে তাহাকে বন্দী করিয়া রাখা হইয়াছিল, সেই গৃহমধ্যে মহম্মদী বেগের তরবারির আঘাতে তাহার দেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত হইয়া যায়। সিরাজের রক্তে জাফরাগঞ্জের যে-গৃহ রঞ্জিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা ভূমিসাৎ হইয়াছে—তাহার কোনই চিহ্ন নাই। সেইখানে একটি প্রকাণ্ড নিবিরু জন্মগ্রহণ করিয়াছিল, এক্ষণে তাহা পড়িয়া গিয়াছে। কয়েক বৎসর পূর্বে সেই গৃহের কিছু কিছু ভগ্নাবশেষ নিষবৃক্ষের নিকট দেখা যাইত; এক্ষণে সে স্থান তৃণাচ্ছাদিত সমতল
- ↑ Orme's Indostan, Vol. II, p. 159.
- ↑ Orme, Vol. II, pp. 160, 161.
- ↑ অর্মে সাহেবের বিবরণ পাঠ করিয়া বোধ হয়, সিরাজউদ্দৌলা মনসুরগঞ্জ বা হীরাঝিলের প্রাসাদে নিহত হইয়াছিলেন। কিন্তু মুতাক্ষরীন ও স্টুয়ার্টে জাফরাগঞ্জই তাহার হত্যাস্থান বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। মুর্শিবাদাবের প্রবাদানুসারেও জাফরাগঞ্জেই সিরাজের হআকাণ্ড সম্পাদিত হইয়াছিল। সুতরাং অর্মের বিবরণে কিছু এম আছে বলিয়া বোধ হয়।