ভূমি। সে স্থানটিকে অদ্যাপি প্রাচীরবেষ্টিত করিয়া রাখা হইয়াছে। তথায় কত গুলি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া তাহাকে একটি ক্ষুদ্র বাগানের ন্যায় করিয়া তুলিয়াছে। সেই স্থানে দুই-একটি গৃহের ভিত্তি দেখা যায়। কিন্তু সিরাজের বধ্যগৃহের কোনই চিহ্ন নাই। সেই সমস্ত ভিত্তি দেখিয়া বোধ হয়, তথায় কতকগুলি গৃহ ছিল; এক্ষণে ভূমিসাৎ হওয়ায়, তাহাদের স্থানে দুই-চারিটি বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। সিরাজের বধ্যভূমি জাফরাগঞ্জ প্রসাদের উত্তর-পূর্ব কোণে। উক্ত স্থানটিকে বিশেষ করিয়া দেখিতে হইলে, জাফরাগঞ্জ প্রাসাদভবনে প্রবেশ করিতে হয়।
জাফরাগঞ্জের প্রাসাদে মীরণের বংশধরগণ অদ্যাপি বাস করিতেছেন। প্রাচীন দরবারগৃহ এমামবারায় পরিণত হইয়াছে; কিন্তু মহলসরা অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। জাফরাগঞ্জের নবাবের গবর্নমেন্টের নিকট হইতে বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা বৃত্তি পাইতেন। মীরণ বিহারে শাহজাদা আলিগওহরের (পরে বাদশাহ শাহ আলম) সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া প্রান্তরমধ্যে বজ্রাঘাতে নিহন হন। মুতাক্ষরীনকার লিখিয়াছেন যে, মীরণের আদেশে সিরাজের মাতা আমিনা ও মাতৃম্বসা ঘসেটী বেগম জলমগ্ন হওয়ায়, তাঁহারা মৃত্যুকালে মীরণকে বজ্রাঘাতে প্রাণপরিত্যাগের জন্য অভিসম্পাত করিয়া যান। সেইজন্য অনুমান করা হয় যে, মীরণের বজ্রাঘাতেই মৃত্যু হইয়াছিল। কিন্তু মীরণের মৃত্যু সন্দেহজনক বলিয়া তৎকালে অনেকের মনে ধারণা হইয়াছিল। মীরণের মনে স্বাধীনতার ইচ্ছ৷ বলবতী হওয়ায়, পুণ্যশ্লোক ব্রিটিশপুঙ্গবগণ মীর কাসেমের সাহায্যে তাহাকে নাকি কৌশল-পূর্বক নিহত করিয়াছিলেন।[১] পরে, বজ্রাঘাতে মৃত্যু বলিয়া প্রকাশ করা হয়। উক্ত জনশ্রুতি সত্য কি মিথ্যা বলা যায় না; তবে তৎকালে সাধারণের মনে যে ঐরূপ সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছিল, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। মীরণের দেহ রাজমহলে সমাহিত করা হয়। রাজমহলের যে-স্থানে মীরণের সমাধি আছে, তাহাকে সরিফাবাজার কহে। সমাধিটি একটি জঙ্গলময় উদ্যানবাটিকার মধ্যে অবস্থিতি করিতেছে। সমাধিটি অদ্যাপি বর্তমান আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রতি কাহারও তাদৃশ যত্ন না থাকায়, তাহ৷ অধিক দিন। পর্যন্ত বর্তমান থাকিবে বলিয়া বোধ হয় না। পূর্বে এই সমাধিভবনটি প্রাচীরবেষ্টিত ছিল এবং ইহাতে লোকজনের বাসস্থানও ছিল। এক্ষণে তৎসমুদায় ভগ্নস্তুপে পরিণত হইয়াছে; স্থানে স্থানে তৎসমুদায়ের চিহ্নমাত্র দেখিতে পাওয়া যায়। সমাধিটির যত্ন করিবার জন্য জাফরাগঞ্জের নবাব-কর্তৃক একটি লোক নিযুক্ত আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রতি কোনই যত্ন লক্ষিত হয় না। মীরণের সমাধির প্রতি মীরণবংশীয়দিগের অধিকতর যত্নবান হওয়া উচিত।
নবাব-নাজিমদিগের সমাধিভবন পশ্চিম মুখে রাজপথের উপরই অবস্থিত। এই বিস্তৃত সমাধিভবন নবাব-বংশীয়দিগের সমাধির দ্বারা এরূপ পরিপূর্ণ হইয়াছে যে,
- ↑ Mutaqherin, Vol. II, p. 132. (Translator's note.)