তথায় তিলমাত্রও স্থান নাই। তথায় ভ্রমণ করিতে করিতে এইরূপ শঙ্কা উপস্থিত হয় যে, পাছে মৃতদেহের প্রতি কোনরূপ অসম্মান প্রদর্শিত হইয়া পড়ে। সমাধিভবনের মধ্যস্থলে একটি শ্রেণীতে সমস্ত নবাব-নাজিমগণ শায়িত আছেন। এই শ্রেণীর পূর্ব সীমায় একটি আবৃত স্থানে গতিয়ারা বেগম নাম্নী নবাব-বংশীয় কোন সম্রান্ত মহিলার সমাধি। তাহার পশ্চিম হইতে একটি শ্রেণীতে ক্রমান্বয়ে দ্বাদশটি সমাধি আছে। পূর্বদিক হইতে আরম্ভ করিলে, প্রথমে মীরজাফরের পিতা সৈয়দ আহম্মদ নজফীর সমাধি দৃষ্ট হয়। তাহার পশ্চিমে মীরজাফরের ভ্রাতা ও রাজমহলের নবাব কাজম আলি খাঁর সমাধি। তাহার পশ্চিমেই নবাব জাফর আলি খা ঁবা ইতিহাস-পরিচিত মীরজাফর খাঁ শায়িত।
মীরজাফরের নূতন পরিচয় দিবার আর আবশ্যক নাই; তাহাকে বঙ্গবাসিমাত্রেই সবিশেষ অবগত আছেন। মীরজাফর সম্ভ্রান্তবংশসদ্ভুত; এই বংশ সৈয়দ বলিয়া পরিচিত। সৈয়দগণ মহম্মদ হইতে আপনাদিগের উৎপত্তি বলিয়া প্রকাশ করিয়া থাকেন। হীনাবস্থা হওয়ায়, জাফর প্রথমতঃ আলিবর্দী খাঁর সংসারে প্রতিপালিত হন। আলিবর্দী তাহাকে সান্তবংশোদ্ভব জানিয়া স্বীয় বৈমাত্রেয় ভগিনী শা খানমের সহিত তাহার বিবাহ দেন। শা খানমই মীরণের মাতা। মীর কাসেম শা খানমের গর্ভজাত। মীরজাফরের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। শা খানম মীর কাসেমের প্রতি সন্তুষ্ট থাকায়, তাহারই নিকটে বাস করিতেন। আলিবর্দী খা ঁমীরজাফরের কার্যদক্ষতায় সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে সেনাপতির পদ প্রদান করেন। মীরজাফর মহারাষ্ট্রীয় যুদ্ধের সময়ে অসামান্য বীর্যবত্তা দেখাইয়া আপনার সুনাম প্রচার করিয়াছিলেন। কিন্তু আলিবর্দীর ভ্রাতৃ-জামাতা আতাউল্লা খাঁর সহিত পরামর্শ করিয়া বঙ্গরাজ্য বিভাগ করিয়া লইবার ইচ্ছা করায়, আলিবর্দী তাহাকে পদচ্যুত করিতে বাধ্য হন। পরে আলিবর্দীর ভ্রাতুস্পুত্র নওয়াজে মহম্মদ খার অনুরোধে তাহাকে পুনর্বার সেনাপতিপদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তাহার পর সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেতা হইয়া, মীরজাফর ইংরেজদিগের সহিত যোগদানপূর্বক সিরাজের সর্বনাশসাধনের পর মুর্শিদাবাদের মসনদে উপবিষ্ট হন। মসনদে বসিয়া তিনি ইংরেজদিগের দুর্ব্যবহারে অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া উঠেন এবং তাহাদিগের হস্ত হইতে আপনাকে মুক্ত করিয়া স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা করেন। তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র মীরণের সেই ইচ্ছ৷ অধিকতর বলবতী ছিল। কিন্তু ইংরেজেরা মীরজাফরকে বলপূর্বক পদচ্যুত করিয়া তাহার জামাতা মীর কাসেমকে সিংহাসন প্রদান করেন। আবার মীর কাসেমের সহিত মনোবিবাদ উপস্থিত হইলে, তাঁহারা পুনর্বার মীরজাফরকেই নবাব মনোনীত করিতে বাধ্য হন। এই সময়ে মীরজাফর নন্দকুমারকে স্বীয় দেওয়ান করিবার জন্য পীড়াপীড়ি করিয়া অনেক কষ্টে কলিকাতা কাউন্সিলের সভ্যগণের মত করিয়া লন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন নন্দকুমারের পরামর্শানুসারে কার্য করিতেন। কমে অন্তিম সময় উপস্থিত হইলে, হিজরী ১১৭৮ অব্দের ১৪ই সাবান (১৭৬৫ খ্রীঃ অব্দের