পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
জাফরাগঞ্জ
১৫৭

সম্পন্ন করিয়াছিলেন। যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে বঙ্গভূমি শ্মশানে পরিণত হইয়া উঠে, সেই ছিয়াত্তরে মন্বন্তরের সময় হিজরী ১১৮৫ অব্দের জেলহজ্জ মাসে (১৭৭০ খ্রীঃ অব্দে) সৈফউদ্দৌলা বসন্ত রোগে আক্রান্ত হইয়া প্রাণ বিসর্জন দেন।

 সৈফউদ্দৌলার পশ্চিমে মীরজাফরের আর এক পুত্র আশ্রফ আলি খাঁর সমাধি। তাহার পরই চতুর্থ নবাব-নাজিম মোবারক উদ্দৌলা নিদ্রিত। মোবারক উদ্দৌলা, মীরজাফরের অন্যতম ভার্যা বব্বুবেগমের গর্ভজাত। মোবারক নাবালক অবস্থায়, নিজামতী প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাহার অভিভাবক নিযুক্ত হইবার জন্য তাহার মাতা, বব্বুবেগম প্রার্থনা করিয়াছিলেন। কিন্তু গবর্নর হেস্টিংসসাহেব তাহার আবেদন অগ্রাহ্য করিয়া, মোবারকের বিমাতা মণিবেগবের নিকট হইতে উৎকোচ গ্রহণপূর্বক তাহাকেই নাবালক নবাব-নাজিমের অভিভাবক নিযুক্ত করেন। এই সময়ে মহারাজ নন্দকুমারের পুত্র রাজা গুরুদাস নবাবের দেওয়ান নিযুক্ত হন। মোবারক উদ্দৌলার, নিজামতী প্রাপ্তির সময় নিজামতের বৃত্তি ৩১,৮১,৯৯১ টাকায় নিদিষ্ট হয়; অবশেষে তাহ ১৬ লক্ষ টাকায় পরিণত হইয়া যায়। ১৭৭২ খ্রীঃ অব্দের জানুয়ারি মাস হইতে নবাব-নাজিমগণ এই ১৬ লক্ষ টাকা বরাবরই পাইয়া আসিয়াছিলেন। নবাব মনসুর আলি খাঁর পর হইতে তাহার অন্যরূপ বন্দোবস্ত হয়। ১৭৯৬ খ্রীঃ অব্দে নবাব মোবারকউদ্দৌলার মৃত্যু ঘটে।

 মোবারক উদ্দৌলার পশ্চিমে পঞ্চম নবাব-নাজিম বাবরজঙ্গের সমাধি। বাবরজঙ্গ মোবারক উদ্দৌলার পুত্র; তিনি দিলার জঙ্গ বা দ্বিতীয় মোবারক উদ্দৌলা উপাধি গ্রহণ, করিয়াছিলেন। ১৮১০ খ্রীঃ অব্দে তিনি পরলোকগত হন। তাঁহারাই পার্শ্বে ষষ্ঠ নবাব-নাজিম আলিজা বা সৈয়দ জৈনুদ্দিন আলি খা ঁশায়িত। আলিজা বাবরজঙ্গের পুত্র; ১৮২১ খ্রীঃ অব্দে তাহার মৃত্যু হয়। আলিজার পার্শ্বে তাহার ভ্রাতা সপ্তম নবাব-নাজিম ওয়ালাজার সমাধি; ওয়ালাজা ১৮২৫ খ্রীঃ অব্দের প্রথমেই প্রাণত্যাগ, করেন।

 ওয়ালাজার পার্শ্বে অষ্টম নবাব-নাজিম হুমায়ু'জা চির নিদ্রাসুখ সম্ভোগ করিতেছেন; ইহাই সর্বশেষ সমাধি। হুমায়ু'জা ওয়ালাজার পুত্র। হুমায়ু'জার সময় মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব-প্রাসাদ নির্মিত হয়। এই পরমসুন্দর প্রাসাদটির নির্মাণকার্যে ন্যূনাধিক নয় বৎসর লাগিয়াছিল। ১৮৩৭ খ্রীঃ অব্দে ইহার নির্মাণ শেষ হয়। ইঞ্জিনিয়ার জেনারেল ম্যাকৃলিয়ডের তত্ত্বাবধানে কেবল দেশীয় লোকদিগের দ্বারা এই প্রাসাদ | নির্মিত হইয়াছিল। প্রাসাদটির নির্মাণে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়িত হয়। প্রাসাদে নবাব-নাজিমগণের এবং বর্তমান নবাব-বাহাদুর ও তদ্বংশীয়গণের অনেক চিত্র আছে। এই সুসজ্জিত সুরম্য প্রাসাদ মুর্শিদাবাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দর্শনীয় পদার্থ। ইহাতে যে-সকল চিত্র আছে, ভারতের প্রায় কোথাও সেরূপ চিত্র দেখিতে পাওয়া যায় না। এই প্রাসাদকে সাধারণতঃ হাজারদুয়ারী কহিয়া থাকে। হাজারদুয়ারী ভাগীরথীতীরেই অবস্থিত। হুমায়ু'জা নির্জনবাস ভালবাসিতেন; এইজন্য তিনি একটি মনোহর