বৃক্ষবাটিক নির্মাণ করেন; তাহার নাম মোবারক মঞ্জিল বা হুমায়ু মঞ্জিল। এই হুমায়ু মঞ্জিল পূর্বে কোম্পানীর বিচারালয় ছিল। মোবারক মঞ্জিল সুন্দর উদ্যানমধ্যস্থিত একটি রমণীয় প্রাসাদ। তাহার ন্যায় মনোেহর স্থল মুর্শিদাবাদে অতি অল্পই আছে। এই স্থানে কষ্টিপ্রস্তরনিমিত একখানি গোলাকার মনসদ আভ্যন্তরীণ চত্বর প্রাঙ্গণে অবস্থিত ছিল। এই মসনদ শা সুজার সময়ে নির্মিত হয়। ইহা রাজমহল হইতে ঢাকায়, পরে তথা হইতে মুর্শিদাবাদে আনীত হইয়াছিল। নবাব-নাজিমগণ পূর্বে ইহাতে উপবেশন করিতেন, এক্ষণে তাহা কলিকাতায় ভিক্টোরিয়া স্মৃতি-মন্দিরে অবস্থিতি করিতেছে।[১] হুমায়ু'জা ১৮৩৮ খ্রীঃ অব্দে প্রাণত্যাগ করেন।
হুমায়ু'জার পর তাহার পুত্র মনসুর আলি বা ফেরুদুজা নিজামতের গদীতে উপবেশন করিয়াছিলেন। মনসুর আলিই বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব-নাজিম। তাহার সময়ে মুর্শিদাবাদের বর্তমান এমামবারা নির্মিত হয়। এই এমামবারা হুগলীর বিখ্যাত এমামবারা অপেক্ষাও বৃহৎ। বর্তমান এমামবারা পুরাতন এমামবারার নিকটেই নির্মিত হইয়াছে। পুরাতন এমামবারা সিরাজউদ্দৌলা-কর্তৃক নিমিত হয়। সিরাজের এমামবারা মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি সুন্দর অট্টালিকা বলিয়া বিখ্যাত ছিল। মহরমের সময় দশ দিবস মহা ধুমধাম হইত; মীরজাফর প্রভৃতিও মহরমের সময় তথায় গমন করিতেন। সিরাজের এমামবারার অনুকরণে মুর্শিদাবাদের অনেক সম্রান্ত লোকের বাটীতে এমামবাড়া নিমিত হইয়াছিল।[২] সিরাজের এমামবারা নষ্ট হইয়া যাওয়ায়, নবাব-নাজিম মনসুর আলি খাঁ ১৮৪৭ খ্রীঃ অব্দে নূতন এমামবারা নির্মাণ করেন। কথিত আছে যে, নূতন এমামবারা ৮১০ মাস মধ্যে নিমিত হইয়াছিল। কেবল মুসলমানদিগের দ্বারা ইহার নির্মাণক্রিয়া সম্পাদিত হয়।
মনসুর আলি খাঁর সময় হইতেই মুর্শিদাবাদের সমস্ত গৌরবের অন্তর্ধান ঘটে। তাহার সময়ে গবর্নমেন্ট নিজামতের সম্মানের অনেক লাঘব করিয়া দেন। নবাব নাজিমের ১৯ তোপ ১৩ তোপে পরিণত হয়। মোবারক উদ্দৌলার সময় হইতে যে ১৬ লক্ষ টাকা নিজামত বৃত্তির জনা চলিয়া আসিতেছিল, তন্মধ্যে নবাব নিজ ব্যয়ের জন্য ৭ লক্ষ টাকা পাইতেন। উক্ত ১৬ লক্ষ টাকা গবর্নর জেনারেল ইচ্ছ৷ করিলে কমাইতে পারিবেন বলিয়া প্রকাশ করা হয়, কিন্তু মনসুর আলির জীবনে গবর্নমেন্ট তাহার লাঘব করিতে ইচ্ছা করেন নাই। পূর্বে কেল্লামধ্যে নবাবের অনুমতি ব্যতীত কেহ প্রবেশ করিতে পারিত না; গবর্নমেন্ট নবাব-নাজিমকে সে ক্ষমতা
- ↑ মসনদের শিলালিপিতে লিখিত আছে যে, “এই মাঙ্গলিক সিংহাসন ১০৫২ হিজরীর ২৭-এ সাবান বিহার প্রদেশস্থ মুঙ্গের নগরে বোখরাবাসী দাসানুদাস খাজা নজর-কর্তৃক নির্মিত হইল।” হিজরী অব্দের শেষ অক্ষরটি অস্পষ্ট, তাহা ২, ৪, ৫, বলিয়া পঠিত হইতে পারে। বেভারিজ উক্ত তারিখকে ১৬৪১ খ্রীঃ অব্দের ১১ই নবেম্বর নির্দেশ করিয়াছেন।
- ↑ Mutaqherin, Vol. II, p. 37.