সমস্ত বণিকদিগকে আদেশ দিলেন। বলা বাহুল্য, ইহাতে ইংরেজদিগের সর্বনাশ উপস্থিত হইল। কাউন্সিলের সভ্যরা পুনর্বার আমিয়ট ও হেসাহেবকে নবাবের নিকট পাঠাইলেন, কিন্তু কোন বিষয়েরই মীমাংসা হইল না। ক্রমে উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, পরস্পরে যুদ্ধসজ্জায় প্রবৃত্ত হইলেন। সেই সময়ে নবাবের কোন কোন কর্মচারী বন্দী-অবস্থায় কলিকাতায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। আমিয়ট ও হেসাহেব নবাবের নিকট হইতে বিদায় চাহিলে, নবাব ঐ সকল কর্মচারীর মুক্তিপর্যন্ত হেসাহেবকে মুঙ্গেরে থাকিতে বলেন।২ হেসাহেবকেও বাধ্য হইয়া মুঙ্গেরে থাকিতে হয়। আমিয়ট নৌকাযোগে মুঙ্গের হইতে কলিকাতায় রওনা হইলেন। নবাব রাজ্যের চতুর্দিকে ইংরেজদিগের সহিত বিবাদের ঘোষণা করিয়া দিলেন।
কলিকাতায় আগমনকালে আমিয়ট মুর্শিদাবাদে নবাবের লোকদ্বারা হত হইলেন। এদিকে পাটনার অধ্যক্ষ এলিস্ পাটনা অধিকার করিয়া বসিলেন, কিন্তু মীর কাসেমের সৈন্যগণ তাহা পুনরধিকার করিয়াছিল। যখন উভয় পক্ষের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠে, তখন উভয়েই পরস্পরকে বাধা দিবার জন্য ক্রমশঃ অগ্রসর হইতে আরম্ভ করিলেন। মেজর আডামসের অধীন ইংরেজসৈন্য রণমদে উন্মত্ত হইয়া ধাবিত হইল। মীর কাসেম সৈন্যদিগকে ইউরোপীয় রণকৈৗশলে সুশিক্ষিত করিয়াছিলেন। তিনি মুঙ্গেরে কারখানা করিয়া কামান, বন্দুক, গোলা প্রভৃতি নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। তাঁহার নির্মিত বন্দুকই ইউরোপীয় বন্দুক অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হইয়াছিল বলিয়া কোন ইংরেজ ঐতিহাসিক উল্লেখ করিয়াছেন।৩ সমরু নামে একজন ইউরোপীয় এবং গর্গিন্ খাঁ ও মার্কার প্রভৃতি কয়েকজন আর্মেনীয় তাঁহার সৈন্যদিগকে সুশিক্ষা প্রদান করিতে প্রবৃত্ত হন। গর্গিন্ খাঁ প্রধান সেনাপতির পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। গর্গিন্ খাঁ খাজা পিনু নামে কলিকাতার একজন আর্মেনীয় সওদাগরের ভ্রাতা। পিত্রুসের দ্বারা গর্গিন্ খাঁর সহিত ইংরেজদিগের গোপনে পরামর্শ চলিত, এইরূপ সন্দেহ হওয়ায়, অবশেষে নবাবের আদেশে গর্গিন্ খাঁ নিহত হন।
১৭৬৩ খ্রীঃ অব্দের ১৯শে জুলাই কাটোয়ার পরপারে পলাশীর নিকট মহম্মদ তকী খাঁর সহিত ইংরেজদিগের যুদ্ধ হয়; এই যুদ্ধে মহম্মদ তকী খাঁকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হইয়াছিল।৪ ২৩শে মুর্শিদাবাদের মোতিঝিলের নিকট নবাবসৈন্য পরাজিত হইয়া সূতীতে পলায়ন করে। ২৫শে ইংরেজেরা মীরজাফরকে পুনর্বার সিংহাসনে উপবেশন করান। ১লা আগস্ট গিরিয়া সমরক্ষেত্রে ইংরেজ ও নবাবসৈন্যের মধ্যে
২ Seir Mutaqherin Trans. Vol. I, p. 237.
৩ Broome's Bengal Army, p. 257.
৪ মহম্মদ তকী খাঁ মীর কাসেমের একজন বিশ্বাসী সেনাপতি ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চন্দ্রশেখরে তাঁহাকে যেরূপ ভাবে চিত্রিত করিয়াছেন, ইতিহাসে তাহা দৃষ্ট হয় না।