নিঃসন্দেহরূপে বলা যাইতে পারে।[১] মীর কাসেম হইতে মুর্শিদাবাদ বা বাঙ্গলার মুসলমান-স্বাধীনতা চিরদিনের জন্য অন্তহিত হয়।
উদূয়ানালার যে-স্থানে ইংরেজের মীর কাসেমের সৈন্যদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন, অদ্যাপি সে স্থান সমভাবেই বিরাজ করিতেছে। সেইখানে একখানি নূতন গ্রাম স্থাপিত হইয়াছে; তাহার নাম উধূয়া। পূর্বে সেই পর্বতময় স্থানে কোন গ্রাম ছিল না; কিন্তু তথায় একটি প্রাচীন দুর্গ ছিল। এই উধূয়া গ্রামের নিকটে উদূয়ানালা গঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে; কিন্তু বর্ষাকাল ব্যতীত অন্যসময়ে ফুদ্কিপুর পর্যন্ত উধূয়ানালার চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উধূয়ানালা যে-স্থানে প্রবাহিত ছিল, এক্ষণে প্রায়ই সেইরূপ ভাবেই আছে। বকাইয়ের দাড়ার সহিত উধূয়ানালা মিলিত হইয়াছে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে-স্থানে মিলিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা হইতে উত্তর-পশ্চিম দিকে মিলিত হইয়াছে। বর্তমান ফুদ্কিপুর উধূয়া হইতে প্রায় এক ক্রোশ দক্ষিণ-পূর্বে। কিন্তু যে-স্থানে ইংরেজ শিবির সন্নিবেশিত হইয়াছিল, তাহা বর্তমান ফুদকিপুর হইতে প্রায় এক ক্রোশ দূরে। সেই স্থানকে এক্ষণে কাঁঠালবাড়ী কহে। কাঁঠালবাড়ীর পশ্চিমে পাহাড়পুর নামক স্থানে ইংরেজশিবির সন্নিবেশিত হয়। অদ্যাপি তথায় পরিখার চিহ্ন আছে। ফুদ্কিপুর প্রসিদ্ধ স্থান বলিয়া তৎসন্নিহিত ক্ষুদ্র পল্লীগুলিও ফুদ্কিপুর নামে অভিহিত হইত। ফুদকিপুর গ্রামের কিছু কিছু স্থান পরিবর্তিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়।
উধুয়াগ্রামের পূর্বে ও উত্তরে গঙ্গা। যে একক, বিচ্ছিন্ন পাহাড়টি নবাব-শিবিরের রক্ষাস্তম্ভরূপে নিদিষ্ট হইয়াছিল, যাহার দুই পার্শ্ব হইতে একদিকে গঙ্গা ও অন্যদিকে দুরতি পর্বতশ্রেণী পর্যন্ত পরিখা বিস্তৃত হইয়াছিল, সেই পীরপাহাড় অদ্যাপি সমভাবে বিরাজ করিতেছে। এই পীরপাহাড়ে কিছুকাল পূর্বে একটি দরগা স্থাপিত
- ↑ "And had not his (Mir Cossim's) subordinate commanders proved deficient in personal courage, or even had he himself had the bravery to animate his troops properly by his own presence in the field, it is more than probable that, the English Company would have been left, from that day without a single foot of ground in these provinces.” (Bolts, Consideration on Indian Affairs, p. 43.) মীর কাসেমের যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা সম্বন্ধে কেহ কেহ বলেন যে, তাহার বিশ্বাসঘাতক সোনাপতিগণ পাছে অন্যান্য নবাবের ন্যায় তাহাকে শহস্তে সমর্পণ করে, এইজন্য তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকিতে সাহসী হইতেন না। “Nor did he hazard his own person in any engagement, where his officers might have made a merit of their treachery in betraying him. These erros which had ruined so many of the Indian princes he carefully avoided.” (Transactions in India, p. 46.) অবশ্য এরূপ আশঙ্কা তাহার মনে হইতে পারে বটে, কিন্তু সে বিষয়ে বিশিষ্টরুপ সতর্কতা অবলম্বন করিয়া তাহার যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকাই উচিত ছিল।