বড়নগর
যাঁহার পবিত্র চরণস্পর্শে বঙ্গভূমি পবিত্রীকৃত হইয়াছিল, যাহার নামেচ্চারণে বঙ্গের গৃহে গৃহে পুণ্যের লহরী প্রবাহিত হয়, বঙ্গের অসংখ্য নরনারী যাহাকে দেবতাবোধে উদ্দেশে প্রণাম করিয়া থাকে, সেই ব্রাহ্মণ-প্রতিপালিনী, দীন-জননী, সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণারূপিনী মহারানী ভবানীর সহিত মুর্শিদাবাদের সম্বন্ধ নিতান্ত অল্প ছিল না। যিনি বঙ্গভূমিতে হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণরক্ষার জন্য প্রকৃত ভবানীরূপে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, যিনি লক্ষ লক্ষ দীনদুঃখীর অশ্রুজল স্নেহাঞ্চলে মুছাইয়া দিয়াছিলেন, বঙ্গদেশ হইতে সুদূর কাশীধাম পর্যন্ত স্থান যাহার অক্ষয় পুণ্যকীতির ঘোষণা করিতেছে, মুর্শিদাবাদও তাহার সেই পুণ্যচ্ছায়ায় অদ্যাপি স্নিগ্ধ হইয়া আছে। আজিও মুর্শিদাবাদের বড়নগর তাহার সেই অতুলনীয় দেবভক্তির কিছু কিছু পরিচয় প্রদান করিতেছে। অরণ্যসম বড়নগরে উপস্থিত হইলে, আজিও ভবানীর সেই পুণ্যকীতির চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। বড়নগর তাহার অতীব প্রিয় বাসস্থান ছিল; তথায় তিনি জীবনের শেষ ভাগ অতিবাহিত করিয়াছিলেন। বড়নগরের ভাগীরথীতীরেই তাহার পুণ্যময় জীবনদীপ চিরনির্বাপিত হয়। তাই বড়নগর হিন্দুর পক্ষে বড় আদরের সামগ্রী; একরূপ তীর্থস্থান বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। যেখানে মূর্তিমতী অন্নপূর্ণা মহারানী ভবানীসহ মহামিলনে চিরসম্মিলিত হইয়াছিলেন, তাহা হিন্দুর নিকট তীর্থস্থান ব্যতীত আর কি হইতে পারে? তাই বড়নগরের প্রত্যেক অণুপরমাণু আমাদের নিকট মহাপবিত্র বলিয়া বোধ হয়। সেই তীর্থস্থানে মহারানী ভবানীদেবীর স্থাপিত দেবমন্দিরসমূহ আজিও বর্তমান থাকিয়া তাহার পবিত্রতা রক্ষা করিতেছে। মুর্শিদাবাদে সমাগত প্রত্যেক হিন্দুর সেই পবিত্র তীর্থস্থান দর্শন করা সর্বতোভাবে বিধেয়।
বড়নগর মুর্শিদাবাদের বারাণসী। ইহার চারিদিকই দেবমন্দিরে পরিপূর্ণ। যদিও এক্ষণে তাহ৷ ঘোর অরণ্যে আবৃত হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি দুই-চারি পদ। অগ্রসর হইতে না-হইতে একটি-না-একটি দেবমন্দির দৃষ্টিপথে পতিত হইবেই হইবে। মুর্শিদাবাদের অন্য কোন স্থানে এত দেবমন্দির দেখিতে পাওয়া যায় না। বারাণসীতে উপস্থিত হইলে, যেমন প্রত্যেক হিন্দুর মনে এক অনির্বচনীয় শান্ত ভাবের উদয় হয়, মুর্শিদাবাদবাসী ও প্রবাসী হিন্দুদিগের মনে বড়নগরও সেইরূপ শান্ত ভাবের সঞ্চার করিয়া থাকে। বারাণসীর ন্যায় ইহারও পদপ্রান্ত দিয়া পুণ্যসলিলা ভাগীরথী আপনার পবিত্র দেহে তরঙ্গ তুলিয়া প্রবাহিত হইতেছেন; বারাণসীর ন্যায় বড়নগরের দেবমন্দিরসমূহের শঙ্খঘন্টারোলে তাহার তরঙ্গলহরীও নৃত্য করিয়া উঠে। মহারানী ভবানীর স্থাপিত ভবানীশ্বর শিব বিশ্বেশ্বর ও রাজরাজেশ্বরী দেবী অন্নপূর্ণারূপে বিরাজ করিতেছেন। ভবানীর পুণ্যবতী কন্যা তারার স্থাপিত গোপালমুতি বিন্দুমাধবের ও অষ্টভুজ গণেশ দুশ্চিরাজের স্থল অধিকার করিয়াছেন, এরূপ বলা যাইতে পারে। অন্নপূর্ণার ন্যায় রাজরাজেশ্বরীর ভবন হইতে কোন ক্ষুধার্তই প্রত্যাবৃত্ত হয় না। এই