পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বড়নগর
১৭৯

দুরে প্রবাহিত ছিলেন। এরূপ অবস্থায় সিরাজের তরণী হইতে তারাকে দর্শন করার সম্ভাবনা থাকিতে পারে কি না? তবে যদি সিরাজের দূরবীক্ষণ ব্যবহারের কথা বলা হয়, তাহা হইলে সম্ভব হইতে পারে। তৃতীয়তঃ সিরাজ যদি তাকে বাস্তবিকই হরণ করিবার ইচ্ছা করিতেন, তাহা হইলে যুদ্ধে অশিক্ষিত কয়েকজন বৈষ্ণবের ভয়ে, তিনি স্বীয় লোকজনদিগকে প্রতিনিবৃত্ত হইতে আদেশ দিতেন কি না? যেরূপে হউক, তিনি স্বীয় ইচ্ছাপূরণের জন্য কি চেষ্টা পাইতেন না? কৃতকার্য হউন বা না। হউন, অন্ততঃ চেষ্টা করিতে কি তিনি ক্ষান্ত হইতেন? সিরাজের চরিত্রহীনতার কথা আমরা বরারই বলিয়া আসিতেছি; সে বিষয়ের সমর্থন করার অধিক আমাদের কিছুই নাই। কিন্তু তাই বলিয়া, তাহার নামে যে-সমস্ত প্রবাদ ও গল্পের সৃষ্টি হইয়াছে, তৎসমুদায় বিশ্বাস করিতে আমরা প্রস্তুত নহি। যে সমুদায় গ্রন্থে সিরাজের চরিত্রহীনতার উল্লেখ দেখা যায়, তাহাদের কোন স্থানে সিরাজ-কর্তৃক কোন ব্যক্তিবিশেষের ধর্ম বা সম্মানহানির উল্লেখ নাই; কেবল তাহার সাধারণ চরিত্রহীনতামাত্রই উল্লিখিত হইয়াছে। যাঁহারা সিরাজের শতনিন্দা করিয়াছেন, কোন সম্রান্তবংশের প্রতি অত্যাচার করিলে, তাঁহারা কি তাহার উল্লেখ করিতে বিস্মৃত হইতেন? বরং তাহা তাহাদিগের মতেরই পরিপোষক হইয়া উঠিত। তবে এই প্রবাদ যেরূপভাবে বিস্তৃত, তাহাতে ইহার কিছু মূল ছিল বলিয়া বোধ হয়। কিন্তু তৎসম্বন্ধে প্রকৃত ঘটনা কি, তাহ বুঝিবার উপায় নাই। ঘটনাটি আলিবর্দী খাঁর জীবিতকালে ঘটিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়; সম্ভবতঃ সিরাজের ঐরূপ কোন ইচ্ছা হইয়া থাকিলেও, আলিবর্দীর জন্য তাহার চেষ্টামাত্রও হয় নাই, ইহাই আমাদের ধারণা। প্রবাদ কিন্তু তাহাকে নানা আকারে পল্লবিত করিয়া তুলিয়াছে। হায়! এই চরিত্রহীনতার জন্য একমাত্র সিরাজই কেবল নিন্দিত হইয়াছেন, কিন্তু তদপেক্ষা শয়তানপ্রকৃতি কয়জনের নাম বাঙ্গলার এইরূপ প্রবাদকাহিনীর মধ্যে গ্রথিত আছে?

 পূর্বে বলা হইয়াছে যে, রানী ভবানীর সমস্ত সৎকীতির উল্লেখ করা এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। কেবল বড়নগরসংক্রান্ত পুণ্যকীতির কথামাত্র উল্লিখিত হইবে। আমরা প্রথমতঃ তাঁহার বড়নগরের দৈনন্দিন ক্রিয়ার উল্লেখ করিতেছি। রানী ভবানী প্রতিদিন রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে গাত্রোখান করিয়া জপকার্যে উপবিষ্ট হইতেন; রাত্রি অর্ধদণ্ড থাকিতে জপ শেষ হইলে, পুষ্পেদ্যানে প্রবেশ করিয়া স্বহস্তে পুষ্পচয়ন করিতেন। যেদিন অন্ধকার থাকিত, সেদিন ভৃত্যের অগ্রপশ্চাৎ মশাল ধরিয়া যাইত। পুষ্পচয়নের পর প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিয়া, বেলা দুই দণ্ড পর্যন্ত ঘাটে বসিয়া জপ, গঙ্গাপূজা ও শিবপূজা করা হইত। তাহার পর প্রত্যেক দেবালয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়া, গৃহে আগমনপূর্বক পুরাণশ্রবণ, শিবপূজা ও ইষ্টপূজা করিতেন। বেলা দুই প্রহর পর্যন্ত এই সমস্ত কার্বে অতিবাহিত হইত। তাহার পর স্বহস্তে রন্ধন করিয়া দশজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন; অবশেষে পরিবারস্থ ব্রাহ্মণসকলের ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া আড়াই প্রহর বেলার পর স্বয়ং হবিষ্যান্ন আহার করিতেন। তদনন্তর দেওয়ান-দপ্তরে