কোন কার্যই ছিল না বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। নন্দকুমার কিঞ্চিৎ স্বার্থপর হইলেও তাঁহার চরিত্র অতীব পবিত্র ছিল, তিনি প্রকৃত ব্রাহ্মণের ন্যায় ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন। ঐ সমস্ত পাপের কার্য তাঁহার মনে অত্যন্ত আঘাত দিত এবং বিপন্নের উদ্ধারের জন্য তাঁহার হৃদয় সর্বদা বিচলিত হইত। উৎপীড়িত লোকেরা তাহার আশ্রয় গ্রহণ করিলে, তিনি তাহদের কল্যাণের ও স্বীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষমতাচুসের জন্য নবকৃষ্ণের অত্যাচারের প্রতিবিধানের উপায় বলিয়া থাকিবেন এবং তাহাদিগকে তজ্জন্য সাহায্যও করিতে পারেন। এইজন্য তিনি শত্রুপক্ষীগণ-কর্তৃক ঐ সকল ব্যক্তিকে মিথ্য অভিযোগে উত্তেজিত করিয়াছেন বলিয়। কথিত হইয়া আসিতেছেন!২৭ লোকের উপকার করিতে গিয়া এরূপ অনেক স্থলে নন্দকুমার শত্রুপক্ষীয়গণ-কর্তৃক নিন্দিত ও অপদস্থ হইয়াছেন।
- - - - - - - - - - -
২৭ নবকৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি প্রথমে কলিকাতার জমিদার চার্লস ফ্লয়ারের নিকট উপস্থাপিত হয়। তিনি তাহাতে বিশ্বাস না করিয়া পরে কাউন্সিলে প্রেরণ করেন। কাউন্সিল হইতে নবকৃষ্ণ অব্যাহত পান। নন্দকুমার ও বোপ্টস্সাহেবের দ্বাবা এই সমস্ত মোকর্দমা উপস্থাপিত হইয়াছিল বলিয়া, কাউন্সিলের সভেরা মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। বোপ্টস্সাহেব তাৎকালিক কোম্পানীর কর্মচারিগণের অত্যাচারের প্রতিবাদ করিতেন বলিয়া, তাহারা বোপ্টমৃসাহেবের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাহাকে নানারূপে অপদস্থ করিতে চেষ্টা করিতেন। নন্দকুমারও সেইজন্য তাঁহাদের বিদ্বেষভাজন হইয়াছিলেন। নবকৃষ্ণের সহিত বোপ্টস্ ও নন্দকুমার উভয়েরই অসম্ভাব ছিল। নবকৃষ্ণ আপনার জবাবপত্রে বোপ্টস্ ও নন্দকুমারের বিষয় বিশেষরূপে উল্লেখ করায়, কাউন্সিলের সভেরা আপনাদের প্রিয়পাত্র নবকৃষ্ণকে প্রমাণাভাব বলিয়া যে নিষ্কৃতি দিবেন তাহাতে বৈচিত্র্য কি? নবকৃষ্ণকে নিস্কৃতি দিয়া তাহার বেপ্টিস্কে এদেশ হইতে বিদায় লইতে ও নন্দকুমারকে গৃহমধ্যে আবদ্ধ থাকিতেও মত প্রকাশ করিয়াছিলেন। কাউন্সিলের বিচার চূড়ান্ত বলিয়া যাঁহারা বিশ্বাস করিতে চান, করিতে পারেন, সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু আমরা যে বিষয়ের উল্লেখ করিলাম, তাহাতে ন্যায্য বিচার হওয়ার সম্ভাবনা কি না, তাহাও একবার তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া রাখি। নবকৃষ্ণ ঐ সমস্ত অপরাধ না করিতে পারেন, কিন্তু নন্দকুমারের নামে তিনি যে দোষারোপ করিয়াছেন, তাহাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারি না। যে ব্রাহ্মণপত্নীর সতীত্ব নষ্ট করিয়াছিছেন বলিয়া তিনি অভিযুক্ত হইয়াছিলেন, সেই ব্রাহ্মণী ও তাহার স্বামীর দ্বারা তিনি পরে সাক্ষ্য দেওয়াইয়াছিলেন যে, নন্দকুমারের নিযুক্ত কয়েকটি লোকের প্রলোভনে ও উত্তেজনায় ব্রাহ্মণ এই মোকর্দমা উপস্থাপিত করে এবং তাহার গ্রীকে নবকৃষ্ণের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিতে বলে। তখনও বঙ্গদেশের এরূপ দুরবস্থা ঘটে নাই যে, একজন ব্রাহ্মণ সামান্য অর্থলোভে স্বীয় ধর্মপত্নীকে অসতী প্রতিপন্ন করিয়া লোকসমাজে অনায়াসে কালযাপন করিতে পারবে। যে দেশে তখনও পর্যন্ত সতীদাহ প্রবলবৃপে প্রচলিত ছিল, সেই দেশের সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির কোন ব্যক্তি যৎকিঞ্চিৎ অর্থলোভে যে আপনার স্ত্রীকে জগতের সমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করবে, ইহা আমাদের মনে স্থান পায় না। নবকৃষ্ণ সেই রাহ্মণপত্নীর প্রতি কোনরূপ অত্যাচার করিয়াছিলেন কিনা জানি না। কিন্তু সত্যই হউক বা মিথ্যাই হউক, উক্ত ব্রাহ্মণপত্নীর অপবাদ ঘোষিত হইলে, তাহার আত্মীয়গণ উক্ত অপবাদ দূরীকরণের জন্য নবকৃষ্ণপক্ষীয় লোকদিগের পরামর্শে শেষে যে উক্ত ব্যাপার নন্দকুমার ও তৎপক্ষীয়