পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কাত্তবাবু

 খ্রীস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রবল ঝটিকা বঙ্গে শান্তভাব আনয়ন করিয়া, ভারতের অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িয়াছে। যে ঝটিকার প্রারম্ভে, হতভাগ্য সিরাজ, মুর্শিদাবাদের সুখময় সিংহাসন হইতে বিচ্যুত হইয়া, অনাথের ন্যায় জীকন্যাসহ উত্তালতরঙ্গময়ী পদ্মার ক্লোড়স্থিত ভগবানৃগোলায় আশ্রয় লইয়াছিলেন, পরে মহম্মদী বেগের তরবারিমুখে আপনার লাবণ্যনিকেতন দেহকে বলি দিয়া, খোসবাগের বৃক্ষচ্ছায়ায় চিরদিনের জন্য সমাহিত হন, তাহারই পরিণামে কার্যদক্ষ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মীর কাসেম স্বকীয় নবগঠিত অক্ষৌহিণী গিরিয়া ও উধয়ানালার সমরে বলি দিয়া, ইংরেজ কোম্পানীর হস্তে, বঙ্গরাজ্য সমপর্ণপূর্বক নিরাশায় ও মনস্তাপে ফকিরী গ্রহণ করিয়া, বঙ্গরাজ্য হইতে বিদায় লইতে বাধ্য হন। মুর্শিদাবাদের ভাগ্যলক্ষী, সেই দারুণ ঝটিকাঘাতে অনন্তকালের জন্য মূছিতা হইয়া পড়িয়াছেন। নবাব মীরজাফর ইংরেজের ক্রীড়াপুত্তলীর ন্যায় বৃদ্ধ বয়সে কিছুদিন মুর্শিদাবাদের মসনদে উপবেশনপূর্বক অস্তিম সময়ে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃতপানে বিষয়তৃষ্ণাশুদ্ধ কণ্ঠকে কথঞ্চিৎ সিক্ত করিয়া, চিরকালের জন্য চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছেন। নবাব নজমউদ্দৌলা ও সৈফউদ্দৌলা অম্পবয়সে ইহলোক পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। অম্পবয়স্ক নবাব মোবারক উদ্দৌলা বিমাতা মণিবেগম ও রাজা গুরুদাসের তত্ত্বাবধানে এক্ষণে মুর্শিদাবাদনিজামতের পরিচয়মাত্র প্রদান করিতেছেন। নজমউদ্দৌলার সময় হইতেই ইংরেজ বাঙ্গলার রাজা, দেওয়ানী তাহাদের হস্তে, নবাব নামে নাজিম (শাসক) মাত্র।

 রাজনৈতিক জগতের এইরূপ পরিবর্তন সংশোধন করিয়া, সেই ভীষণ ঝটিক বঙ্গে আর এক ভয়াবহ কাণ্ডের অবতারণা করিল। . বাঙ্গলা ১১৭৬ সালের কৃতান্তদূতস্বরূপ প্রবল-দুভিক্ষ উপস্থিত হইয়া, “সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা” বঙ্গভূমিকে সাহারার দিগন্তপ্রসারিণী মরুভূমি অপেক্ষাও ভয়াবহ করিয়া তুলিল। অন্নাভাবে বঙ্গবাসিগণ কঙ্কালমাত্রে পর্যবসিত হইয়া, প্রেতভূমির চিত্র স্মরণ করাইতেছিল। প্রজ ও জমিদার উভয়েরই সর্বনাশ সংঘটিত ছিল। এই প্রকারে অশেষবিধ কষ্ট ভোগ করিয়া, বঙ্গমাতা এক্ষণে শান্তিদেবীর ক্লোড়ে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন। ইংরেজ কোম্পানী স্বহস্তে রাজ্যভার লইয়া, নবাবকে আপনাদের বৃত্তিভোগী করিয়া রাখিয়াছেন। দেওয়ানী-গ্রহণের পর লর্ড ক্লাইব নায়েব-দেওয়ান নিযুক্ত করিয়া, যেরূপ দ্বিবিধশাসনের (Double government) অবতারণা করেন, সে প্রথাও রহিত হইয়াছে। এক্ষণে কলিকাতায় কোম্পানীর অধ্যক্ষ গবর্নর জেনারেল নামে অভিহিত হইয়া, কতিপয় সদস্যসহ ভারতের সমগ্র ব্রিটিশ অধিকারের অধিশ্বর হইয়াছেন। ব্রিটিশকেতনলাঞ্ছিত কলিকাতা নগরী, নব নব সৌধমালায় বিভূষিত হইয়া, ভাগীরথীনীরে স্বীয় কান্তিচ্ছবি প্রতিবিম্বিত করিতেছে। ফোর্ট উইলিয়মের বিজয়বাদ্য স্নিগ্ধগম্ভীরঘোষে দিখণ্ডল মুখরিত করিতেছে। এইরূপে ইংরেজ কোম্পানী বঙ্গরাজ্যের অধীশ্বর হইয়া,