পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 কমলউদ্দীন গঙ্গাগোবিন্দসিংহ প্রভৃতি কয়েকজনের নামে কাউন্সিলে অভিযোগ করিবার জন্য মহারাজ নন্দকুমারকে যে কয়েকখানি দরখাস্ত পেশ করিতে দেয়, বেভারিজসাহেব বলেন যে, তাহার একখানিতে এইরূপ লেখা আছে—“বিলায়তি ১১৮১ সালের বৈশাখ মাসে রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, লোকনাথনন্দীর জন্য আমার নিকট হইতে হিজলীর দরইজারা লয় এবং আর্চডেকিনসাহেব তাহার জামিন হন।” ইহা হইতে স্পষ্ট অনুমান করা যাইতে পারে যে, কান্তবাবুর সহিত হিজলীর মহালের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল। কান্তবাবু সমস্ত জমিদারী ও নিমক-মহাল স্বীয় পুত্র লোকনাথের নামে লইতেন; বাহারবন্দ তাহার প্রমাণ। লোকনাথ সে সময়ে ১১।১২ বৎসরের বালক হইলেও, হেস্টিংস-কর্তৃক অর্থশালী ও বিশ্বস্ত বলিয়া কথিত হইতেন। রাজস্বসংক্রান্ত কাগজপত্রে লোকনাথনন্দীর লবণের কারবারসম্বন্ধে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। হেস্টিংস কাউন্সিলে বলিয়াছিলেন যে, কমলউদ্দীনের পূর্বে এই সমস্ত লবণের মহাল কাস্তেরই ইজার ছিল। যদিও তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছিলেন যে, কমল ইজার লওয়ায় কাস্তের কোনও লাভ হয় নাই, কিন্তু কমলের দরখাস্ত হইতে জানা যায় যে, কাস্তবাবু রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হিজলীর দরইজারা লন এবং বারওয়েল প্রভৃতির পত্রে প্রকাশ যে, কমলের দরইজারদারগণই মহাল হইতে প্রকৃত লাভ করিতেন। ক্লেভারিংসাহেবও বলেন যে, কমল ও কান্ত দুই জনেই হিজলীর অংশীদার ছিলেন।২০ বেভারিজসাহেব এ বিষয়ের অনেক প্রমাণ প্রদর্শন করিয়াছেন, বাহুল্যভয়ে আমরা তাহার উল্লেখ করিলাম না। এ সম্বন্ধে তিনি একখানি পত্র ও তাহার উত্তর তাহার গ্রন্থের পরিশিষ্টে প্রদান করিয়াছেন। নিম্নে তাহার মর্ম প্রদত্ত হইল।

 কলিকাতার রাজস্ব-সমিতির সভোর ১৭৭৪ খ্রীঃ অব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি গবর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের সভ্যদিগকে এইরূপ লিখিয়া পাঠান যে, আপনাদিগের ইচ্ছানুসারে কান্তবাবু ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদিগকে, যাহাদের হিজলী প্রভৃতি স্থানে লবণের ঠিক বন্দোবস্ত আছে, জানান হয় যে, কোম্পানীর নামে ১oo মণে ৮৬ সিক্কা টাকা লইয়া কলিকাতায় লবণ পহুছিয়া দিতে হইবে। তাহাতে তাহার এইরূপ আপত্তি করে যে, ইহাতে তাহদের খরচ উঠিবে না এবং কান্তবাবুর এইরূপ অনুরোধ যে, কোম্পানীকে লবণ দেওয়ার পরিবর্তে ১oo মণে ২০ টাকা লাভ দিতে ইচ্ছা করেন। ইজারদারের ইচ্ছা যে, সমস্ত ঠিক বন্দোবস্ত তাহার অধীন হইলে, সে কোম্পানীর যথেষ্ট সুবিধা করিতে পারে। কান্তবাবুর গত বৎসরের লবণের প্রস্তাবানুসারে আমরা বিশেষ অনুসন্ধানে অবগত হইয়াছি যে, কোম্পানীর ৫o টাকা সমেত তাঁহার ১৫o টাকা ব্যয় পড়িবে। তাঁহার অগ্রিম টাকা দেওয়ার পর হইতে অনেক সময় অতিবাহিত হইয়াছে। এক্ষণে সমগ্র ঠিকা বন্দোবস্ত ইজারদারের অধীন হইলে, তাহাকে ঋণগ্রস্ত হইতে হইবে ইত্যাদি। গবর্নর জেনারেল ৮ই তাহার এইরূপ উত্তর

 ২০ Trial of Maharaja Nandkumar, pp. 234-38.