পাঠান যে, আমরা কান্তবাবুর গত বৎসরের প্রস্তাবে সম্মত আছি। আপনারা তাহার সহিত ১০০ মণে ৫০ টাকা দিবার বন্দোবস্ত করিবেন; ও শুল্ক দিবারও বন্দোবস্ত করিবেন ইত্যাদি।২১
ইহা হইতে স্পষ্টই প্রতীতি হইতেছে যে, কান্তবাবুর সহিত হিজলীর নিমক মহালের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল এবং কান্তবাবু ও অন্যান্য ব্যবসায়ীর অসুবিধা বিবেচনায় রাজস্বকমিটির সভভ্যরা কাউন্সিলের নিকট আবেদন করিতেছেন; এরূপ আবেদন আমরা কিন্তু অন্য কোন স্থানে দেখিতে পাই না। হেস্টিংসসাহেবের প্রিয়পাত্র কান্তবাবুর সহিত ইহার বিশেষ সম্বন্ধ না থাকিলে, কদাচ তাহারা এরূপ আবেদন করিতেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। অন্যান্য ব্যবসায়ীর কথা যে নামমাত্র তাহা সকলে সহজে উপলব্ধি করিতে পারেন। কাউন্সিল হইতেও তাহার সুবিধার জন্য হুকুম প্রদত্ত হইল। কান্তবাবুর প্রায় জমিদারী ও মহাল লোকনাথের নামে লওয়া হইত, কিন্তু কাউন্সিলে ও রাজস্বকমিটি প্রভৃতি স্থানে কর্তৃপক্ষগণ এরুপ সাহস অবলম্বন করিতেন যে, কান্তবাবুর নিজ নামে সমস্ত কথাবার্তা চালাইতে তাহার৷ কিছুমাত্র কুষ্ঠিত হইতেন না। উপরোক্ত পত্র হইতে ইহা বেশ বুঝা যায়। যদিও কোম্পানীর নিয়মানুসারে কোন সরকারী কর্মচারীর বেনিয়ান বা পেস্কারাদি কোন জমিদারী বা ফারম ইজারা লইতে পারিত না, তথাপি লোকনাথের নামে কান্তবাবুকে জমিদারী মহালাদি প্রদান করিয়া, তাহারা অনেক সময়ে প্রকাশ্যভাবে কান্তবাবুর নাম করিয়া তর্কবিতর্ক করিয়াছেন। তাহারা যে অনেক সময়ে ডিরেক্টর প্রভৃতির আদেশ অবহেলা করিতেন, ইহা হইতে তাহা বেশ বুঝা যায়। উপরোক্ত পত্র ও তাহার উত্তর ১৭৭৪ খ্রঃ অব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে লিখিত হয়। কমলউদ্দীন ১৭৭২ খ্রীঃ অব্দে হিজলীর ইজারাদার নিযুক্ত হয়। পূর্বে একস্থানে লিখিত হইয়াছে যে, হেস্টিংস দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন যে, কমলউদ্দীন হিজলীর ইজারা লওয়ায় কান্তের লোকসান হইতেছে। সুতরাং বুঝা যাইতেছে যে, কমলউদ্দীন ইজারাদার হইবার পূর্বে ও পরে কান্তের সহিত হিজলীর লবণমহালের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল, এবং তাহার লাভের যাহাতে ক্ষতি না হয়, তদ্বিষয়ে কর্তৃপক্ষগণের বিশেষ দৃষ্টি ছিল। কমলউদ্দীনও প্রকাশ করিয়াছে, লোকনাথ রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হিজলীর দরইজারা লইয়াছেন। ইত্যাদি কারণে কমলউদ্দীন স্পষ্টতঃ কান্তবাবুর বেনামদার না হইলেও, কমলের সহিত তাহার যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। সুতরাং স্টিফেনসাহেব বেভারিজসাহেবকে প্রমাণাভাবে যে দোষ দিয়াছেন, তাহা সঙ্গত নহে। এইরূপে আমরা দেখিতে পাই যে, তৎকালে এ দেশে যে-কোন লাভকর জমিদারী বা মহাল ছিল, কান্তবাবুর সহিত তাহাদের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল। হেস্টিংসের যত্নে চঞ্চল লক্ষী অনেক লোককে পরিত্যাগ করিয়া, কান্তবাবুকে আশ্রয় করতে বাধ্য হন।
২১ Trial of Maharaja Nondkumar, Appendix, pp. 402-403.