পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

কান্তবাবুর যে কিছু কিছু ধর্মভীরুতা ছিল, তাহাও বেশ বুঝা যায়। কিন্তু অর্থলালসার জন্য তিনি যে সমস্ত অসৎকার্য করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার জীবনে দুরপনেয় কলঙ্ক প্রদান করিয়াছে, তাহাতেও সন্দেহ নাই। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ নন্দকুমারের হত্যায় তাঁহার যোগের কথা এবং রানী ভবানীর নিকট হইতে বাহারবন্দগ্রহণের কথা যখন মনে হয়, তখন তাঁহার অহিন্দুজনোচিত ব্যবহার স্মরণ করিয়া বাঙ্গালী জাতির প্রতি ঘৃণার উদয় হইয়া থাকে। যাহা হউক, কান্তবাবু একেবারে ধর্মহীন ছিলেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস।

 কান্তবাবু সম্বন্ধে আমরা যতদূর সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি তৎসমুদায় সাধারণের নিকট প্রকাশ করিলাম। এক্ষণে তদ্বংশীয়গণের সম্বন্ধে দুই এক কথা বলিয়া, আমরা প্রবন্ধের উপসংহার করিব। কান্তবাবুর মৃত্যুর পর মহারাজ লোকনাথ বাহাদুর অতীব দক্ষতাসহকারে পিতৃগৌরব ও নিজ কীর্তিবিস্তারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়লাভের অব্যবহিত পরেই কালব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায়, তিনি স্বীয় জীবনকে ক্লেশকর বিবেচনা করিয়াছিলেন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন রোগের আক্রমণে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করিতে বাধ্য হন। বাঙ্গলা ১২১১ সালে তাঁহার জীবনবায়ুর অবসান হয়।

 মহারাজ লোকনাথের মহিষীর নাম রাজ্ঞী সুসারমোহিনী। মহারাজের মৃত্যুর পর তাঁহার একবর্ষবয়স্ক শিশুপুত্র কুমার হরিনাথ কাশীমবাজার রাজসম্পত্তির অধিকারী হন। তিনি অত্যন্ত শিশু বলিয়া সম্পত্তি কোর্ট অব্ ওয়ার্ডসের অধীন হয়। হরিনাথ প্রাপ্তবয়স্ক হইয়া অনেক সৎকার্যে অকাতরে অর্থব্যয় করিয়াছিলেন। হিন্দু-কলেজের স্থাপনের জন্য তিনি ১৫,ooo হাজার টাকা প্রদান করেন। তিনি অত্যন্ত প্রজাবৎসল ছিলেন। স্বীয় জমিদারীর মধ্যে প্রজাদিগের জলকষ্ট হইলে, তিনি পুষ্করিণী খনন করাইয়া তাহার নিবারণ এবং অন্যান্য অনেক প্রকার উপায়ে প্রজাদের উপকার করিতেন। কাশীমবাজার-রাজবংশের ন্যায় প্রজাবৎসল জমিদার অতি অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। হরিনাথ পণ্ডিত, সঙ্গীতজ্ঞ ও ব্যায়ামকারীদিগকে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করিতেন। তাঁহার সময়ে কাশীমবাজারের বিখ্যাত নৈয়ায়িক কৃষ্ণনাথ ন্যায়পঞ্চানন বঙ্গদেশমধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। লর্ড আমহার্স্ট কুমার হরিনাথ বাহাদুরকে রাজোপাধি প্রদান করেন।

 ১২৩৯ সালে ১৪ই আগ্রহায়ণ হরিনাথ একমাত্র পুত্র কৃষ্ণনাথ, বিধবা রাজ্ঞী হরসুন্দরী ও কন্যা গোবিন্দসুন্দরীকে রাখিয়া পরলোকগত হন। কুমার কৃষ্ণনাথ অপ্রাপ্তবয়স্ক বলিয়া বিষয় কোর্ট অব্ ওয়ার্ডসের অধীন হয়। কুমার কৃষ্ণনাথ বাল্যকালে ইংরেজী ও পারস্য ভাষায় উত্তমরূপে শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন। সে সময়ে ইংরেজী শিখিয়া বাঙ্গলার কৃতী সন্তানগণ যে দোষ অর্জন করিতেন, কৃষ্ণনাথেরও তাহাই ঘটে। যৌবনারম্ভে তিনি ইংরেজী সভ্যতানুযায়ী অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠেন, কিন্তু তিনি পিতার সমস্ত সদগুণের অধিকারী হইয়াছিলেন। তাঁহার হৃদয়