পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ
৩১১

কাগজপত্র রক্ষিত হইত। সুতরাং উহাদের নিকট সমস্ত রাজস্বের মূলসূত্র ছিল। তৎকালে কাননগোদিগের বিভাগে অনেক লোক নিযুক্ত হইত। সমস্ত বাঙ্গলারাজ্যের প্রত্যেক ভূমির বিবরণ যাঁহাদিগকে সংগ্রহ করিতে হইত, তাঁহাদের সাহায্যের জন্য কত লোকের আবশ্যক, তাহ সহজে অনুমান করা যাইতে পারে। খালসার দেওয়ান বা রায়রায়ান প্রকৃত প্রস্তাবে সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতেন; কারণ রাজস্বসংক্রান্ত সমস্ত বন্দোবস্তের ভার তাঁহারই হস্তে ন্যস্ত ছিল। নবাবেরা যুদ্ধবিগ্রহ দেশশাসন, কেহ বা আপনাদের আমোদপ্রমোদ লইয়াই ব্যস্ত থাকিতেন; সুতরাং রায়রায়ান রাজস্ব-মন্ত্রিপদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, তাঁহার দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুতরই ছিল। রায়রায়ান ও কাননগোব্যতীত রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ে জগৎশেঠদিগকেও একটি পদ লইতে হইয়াছিল। তাঁহারা বাদশাহের পেস্কারস্বরূপ দিল্লীতে বাঙ্গলার রাজস্ব পৌঁছাইয়া দিতেন।

 ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানীগ্রহণের পর এই সমস্ত বিষয়ের কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু অনেকগুলি নিয়ম রক্ষিতও হইয়াছিল। ক্লাইব মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাবরায়কে যথাক্রমে মুর্শিদাবাদ ও পাটনার নায়েব-দেওয়ানী পদে নিযুক্ত করিয়া রাজস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় ভার তাঁহাদের উপর প্রদান করেন। কাননগো প্রভৃতি কর্মচারী তাঁহাদের অধীন হন। এই সময়ে বঙ্গাধিকারী লক্ষীনারায়ণ ও মহেন্দ্রনারায়ণ দুই জনে মুর্শিদাবাদে কাননগোর কার্য করিতেছিলেন। পুরুষানুক্রমে তাঁহারা উক্ত কার্য করিয়া আসিয়াছেন। মুসলমান রাজত্বকালে তাঁহাদের কাননগোগিরিতে সবিশেষ দক্ষতা থাকায়, কোম্পানীও তাঁহাদিগকে আপনাদিগের কার্যে নিযুক্ত করেন। বিশেষতঃ পুরুষানুক্রমে জমি-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র তাঁহাদের হস্তে অবস্থিত; সুতরাং তাঁহারা দেশের জমাজমির বিষয় যেরূপ অবগত থাকিবেন, এবং তাঁহাদের দ্বারা যেরূপ সুচারুরূপে কার্য সম্পন্ন হইবে, নূতন লোকের দ্বারা তাহা সম্ভবপর নহে; কাজেই কোম্পানী তাঁহাদিগকে রাখিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। তাঁহারা সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়া নায়েব-দেওয়ানকে রাজস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের পরামর্শ দিতেন বলিয়া, নূতন বন্দোবস্তের সময় কোম্পানীকে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হয় নাই।

 গঙ্গাগোবিন্দের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাধাকান্ত বরাবরই বঙ্গাধিকারাদিগের সেরেস্তায় কার্য করিতেন। কোম্পানীর রাজত্বেও তিনি উক্ত কার্য দক্ষতার সহিত নির্বাহ করিয়াছিলেন। গঙ্গাগোবিন্দ বাল্যকাল হইতে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন বলিয়া, অনেক কার্যে রাধাকান্তের সাহায্য করিতেন এবং অনেক সময়ে রাজস্বসম্বন্ধে তাঁহাকে সৎপরামর্শ দিতেন। রাধাকান্ত উক্ত কার্য পরিত্যাগ করিলে, গঙ্গাগোবিন্দ সেই পদে নিযুক্ত হন এবং নিজ দক্ষতা প্রকাশ করিয়া মহম্মদ রেজা খাঁর প্রিয়পাত্র হইয়া উঠেন।

 এই সময় হইতে তাঁহার রাজস্ব-সংক্রান্ত প্রতিভা দেশমধ্যে বিস্তৃত হইয়া পড়ে।
 ৫ রায়রায়ান ও কাননগোপ্রসঙ্গ 'বঙ্গাধিকারী' প্রবন্ধে বিশেষরূপে উল্লিখিত হইয়াছে।