বলিয়া, তাহার উপর ক্রোধ প্রকাশ করিয়াছিলেন। ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে অবশিষ্ট ২ লক্ষ টাকার কি হইল, তাহা বোধ হয়, নূতন করিয়া বলিয়া দিতে হইবে না। হেস্টিংস ও তাহার প্রিয় দেওয়ানজী গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ উভয়ে যে আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, ইহা বোধ হয়, বুঝিতে কাহারও বিল হইবে না। কোম্পানীর সৌভাগ্য বলিতে হইবে যে, সেই ৪ লক্ষ টাকাই তাহাদের বিশ্বস্ত কর্মচারিগণের উপহারে প্রযুক্ত হয় নাই।
দিনাজপুরের পর বিহারের বন্দোবস্তের সহিত গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ বিজড়িত ছিলেন বলিয়া অনেকে অনুমান করিয়া থাকেন। নূতন বন্দোবস্তের সময় খেলারাম ও কল্যাণসিংহকে বিহারের ইজারা প্রদান করা হয় এবং কল্যাণসিংহকে সেখানকার দেওয়ানের পদে নিযুক্ত করাও হইয়াছিল। এই সমস্ত বন্দোবস্তের ভার গঙ্গাগগাবিন্দ সিংহের হস্তে পতিত হওয়ায়, তিনি নিজের ও প্রভু হেস্টিংসের সুবিধা করিতে লুটি করেন নাই। দিনাজপুরের রাধানাথের ন্যায় দেওয়ানজী খেলারাম ও কল্যাণসিংহকে চাপিয়া ধরিলেন এবং তাহাদের নিকট হইতে ৪ লক্ষ টাকা আদায় করিয়া লইলেন। যদিও এ সম্বন্ধে প্রমাণ হইয়াছিল যে, হেস্টিংস তাহাদের নিকট হইতে ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করিয়াছিলেন বটে, তথাপি দিনাজপুরের ন্যায় স্পষ্টতঃ গঙ্গাগোবিন্দের দ্বারা তাহা গ্রহণ করা হইয়াছিল কি না, তদ্বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। কিন্তু ইয়ং, এণ্ডার্সন, মুর প্রভৃতি হেস্টিংসের বিচারে সাক্ষ্য-প্রদানকালে বলিতে বাধ্য। হইয়াছিলেন যে, তাঁহারা শুনিয়াছেন, গঙ্গাগোবিন্দের দ্বারাই হেস্টিংস খেলারাম ও কল্যাণসিংহের নিকট হইতে উক্ত ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন।[১] গজাগোবিন্দ যে তাহাদের নিকট হইতে সেই ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। কারণ সে সময়ে তিনি রাজস্ববিষয়ে সর্বেসর্বা। সমিতির দেওয়ান হওয়ায়, তাহার প্রতি রাজস্ব-সম্বন্ধীয় যাবতীয় প্রমাণের ভার অপিত ছিল, এবং খেলারাম ও কল্যাণসিংহকে বিহারের ইজারা ও কল্যাণসিংহকে দেওয়ান নিযুক্ত করা যে তাহার দ্বারা সম্পন্ন হইয়াছিল, ইহারও বেশ প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং তিনি যে তাহাদের। নিকট হইতে টাকা লইয়াছিলেন, তাহা অনায়াসে বলা যাইতে পারে। দিনাজপুরের ন্যায় এখানে ২ লক্ষ টাকা অনাদায়ের কথাও শুনা যায়।[২] অবশিষ্ট টাকার কি হইল, অথবা তাহা আদায় হইয়াও অনাদায়ের ন্যায় গণ্য হইয়াছে, এ সমস্ত রহস্যজনক কথা হেস্টিংস ও দেওয়ানজীব্যতীত আর কেহই অবগত নহেন। হেস্টিংস স্পষ্টতঃ স্বীকার না করিলেও, অন্যান্য প্রমাণ হইতেও বেশ বুঝা যায় যে, বিহারের উৎকোচ ব্যাপারে তাহার প্রিয়বন্ধু গঙ্গাগোবিন্দই লিপ্ত ছিলেন এবং দিনাজপুরের ন্যায় বিহারেও দেওয়ানজী নিজের ও নিজ প্রভুর উদরপূরণের জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন।