জানি না, গোলাম আশরফের উক্ত ব্যাপারে দেওয়ানজী ও তাহার পুত্র লিপ্ত ছিলেন কি না। অর্থতৃষ্ণায় তাহাদিগকে যেরূপ অন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল,, তাহাতে ঐরূপ। ব্যাপার তাহাদিগের পক্ষে নিতান্ত অসম্ভব বলিয়াও বোধ হয় না এবং সমিতির অনুসন্ধান ও মন্তব্য যে সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাহাই বা কেমন করিয়া বলিতে পারি। আমরা যে সমিতিকে বরাবর গঙ্গাগোবিন্দের ক্রীড়াপুত্তল স্বরূপ বলিয়া আসিয়াছি, সে সমিতির অনুসন্ধান ও বিচারে তিনি ও তাঁহার পুত্র নিষ্কৃতি পাইবেন, তাহারই বৈচিত্র্য কি? গবর্নর জেনারেল হেস্টিংসেরও যে ইহাতে কোন ইঙ্গিত থাকিতে না পারে, তাহাই বা কে বলিতে পারে। এই সকল কথা বলিবার কোন বিশেষ কারণ আছে বলিয়া আমাদিগকে বলিতে হইল। উক্ত জাল অভিযোগ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া, প্রাণকৃষ্ণ এক মানহানির অভিযোেগ উপস্থাপিত করিয়াছিলেন। রামচন্দ্র সেন ও গোপী নাজির নামে দুই জন গোলাম আশরফের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া তাহার। সম্মানহানির জন্য মিথ্যা মোকর্দম উপস্থিত করিয়াছে বলিয়া প্রাণকৃষ্ণ এই অভিযোগ উপস্থাপিত করেন।
এই স্থলে আমরা রামচন্দ্র সেনের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করিতে ইচ্ছ৷ করিতেছি। রামচন্দ্র সেন বৈদ্যবংশসস্তৃত। তাহাদের পূর্বপুরুষগণের নিবাস। কৃষ্ণনগরে ছিল এবং নদীয়ার রাজসরকারে তাঁহারা কার্য করিতেন। রামচন্দ্রের পিতা কৃষ্ণরাম, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কোপে পতিত হইয়া কিছুদিন কারাবাস ভোগ করেন। শুনা যায় যে, রামচন্দ্র দিল্লীর বাদশাহ ও মুর্শিদাবাদের নবাবের সাহায্যে পিতার অবমাননার প্রতিশোধ লইবার জন্য, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছিত করিয়াছিলেন। রামচন্দ্র কৃষ্ণনগর হইতে গুপিপাড়ার নিকট সোমড়ায় বাস করেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন বলিয়া নবাব ও কোম্পানীর সরকারে অনেক কার্য করিয়াছিলেন। ১৭৭৯ খ্রীঃ অব্দে গঙ্গাগোবিন্দের পদচ্যুতি ঘটিলে, রামচন্দ্র ফিলিপ ফ্রান্সিসের যত্নে তাহার পদে নিযুক্ত হন। এইজন্য গঙ্গাগোবিন্দ সর্বদা তাহাকে হিংসার চক্ষে দেখিতেন। তাহার পর গঙ্গাগোবিন্দ পুনর্বার স্বীয় পদে নিযুক্ত হইয়া সর্বদা রামচন্দ্রের অনিষ্ট চেষ্টা করিয়া বেড়াইতেন। উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত মনোবিবাদ ছিল। রামচন্দ্রের বিবরণে জানা যায় যে, তাহার ন্যায় পরদুঃখকাতর, পরোপকারী, উদারচেতা লোক অতি অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। কোম্পানীর কর্মচারিগণ কর্তৃক উৎপীড়িত জমিদার ও প্রজাগণের জন্য প্রাণপণে যত্ন করিয়া তিনি গবর্নর জেনারেল হইতে সামান্য কর্মচারী পর্যন্ত সকলেরই বিরাগভাজন হইয়া উঠেন; এবং গঙ্গাগোবিন্দের সহিত অত্যন্ত বিবাদ থাকায়, গোলাম আশরফের সহিত লিপ্ত বলিয়া অভিযুক্ত হইয়া পড়েন। ৪০ দিবস ব্যাপিয়া এই মানহানির বিচার হয়। জুরীগণের বিচারে গোপীনাথ মুক্তি পায়। রামচন্দ্র গোলাম আশরফের সহিত মিলিত হইয়া প্রাণকৃষ্ণ ও দেওয়ানের বিরুদ্ধে এক মিথ্যা আজি লিখিয়া দাখিল করিয়াছেন বলিয়া