সম্পত্তি হস্তান্তর করিবার কোন ক্ষমতা নাই বলিয়া, কাউন্সিলে আবেদন করিলে, কাউন্সিলের অনুসন্ধানে এইরূপ জ্ঞাত হওয়া যায় যে, রাজার যে আত্মীয় সম্মতি দিয়াছিলেন, তিনি এইরূপ বলেন যে, আমি জাতিনাশের ভয়ে সম্মতি দিয়াছি। আমি যদি সম্মতি না দিতাম, তাহা হইলে গঙ্গাগোবিন্দের মাতৃশ্রাদ্ধে আমার নিমন্ত্রণ হইত না।[১] সুতরাং তাহাতে আমাকে একরূপ সমাজচ্যুত হইতে হইত।
গঙ্গাগোবিন্দ যখন দেখিলেন যে, নাবালকের সম্পত্তি লওয়ায় বাস্তবিক বিপদ ঘটিতেছে, তখন তিনি এই সুর ধরিলেন যে, নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা না থাকিলেও গবর্নমেন্ট যাহাকেই ইচ্ছ৷ তাহাকেই সে সম্পত্তি দিতে পারেন। অতএব গবর্নমেন্টের নিকট হইতে যখন আমি অনুমতি পাইয়াছি, তখন সালবাড়ী প্রত্যর্পণ করিতে পারি না। তিনি জানিতেন যে, যদিও হেস্টিংস গমনোম্মুখ, তথাপি তাহার ক্ষমতা একেবারে তিরোহিত হয় নাই। কাউন্সিলের সভ্যের রাজস্ব-সমিতির মত চাহিয়া পাঠান। জনৈক সভ্য স্টেবসসাহেব গঙ্গাগোবিন্দের বিরুদ্ধে মত দিয়া সালবাড়ী প্রত্যর্পণ করিতে এবং গঙ্গাগোবিন্দ ও প্রাণকৃষ্ণকে পদচ্যুত করিয়া রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার রায়রায়ান রাজা রাজবল্লভের হস্তে অর্পণ করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাহার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়।[২] তাহার পরে হেস্টিংসসাহেব ইংলণ্ডে যাত্রা করেন। গমনকালে গঙ্গাগোবিন্দ জাহাজে স্বীয় প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। দুই বন্ধুর বহুকালজাত প্রণয় বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, দুই জনে উষ্ণ দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সহিত বিদায় গ্রহণ করেন।
হেস্টিংসের পর শান্তিপ্রিয় লর্ড কর্নওয়ালিস আসিয়া ভারতসিংহাসনে উপবিষ্ট হন। হেস্টিংস অশান্তির অগ্নিতে ভারতবর্ষ দগ্ধ করিয়াছিলেন, কর্নওয়ালিস তাহাতে শান্তিবারি সেচন করিতে উদ্যোগী হইলেন। বিশেষতঃ বাঙ্গলার বিপন্ন জমিদার ও প্রজাগণ অবিরত যে অর্থশোষণের অগ্নিতে পুড়িয়া মরিতেছিল, তিনি একেবারে তাহা নির্বাপিত করিয়া ফেলিলেন। বাঙ্গলায় তাহার বিরাটু কীতি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে তিনি জমিদার ও প্রজা উভয়েরই বিশেষ উপকার করিয়া গিয়াছেন। তিনি গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতি সকলেরই বিশেষরূপ পরিচয় পাইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা অনেক দিন হইতে রাজস্ববিভাগের কার্য করায়, কর্নওয়ালিস্ তাহাদিগের দ্বারা সাহায্য হইবে বিবেচনায় গঙ্গাগোবিন্দকে জমানবিশের পদে নিযুক্ত করেন। তাহার সময়ে রায়রায়ান রাজবল্লভ পুনর্বার রাজস্ববিভাগের কর্তা হন; গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ প্রভৃতি তাহার অধীন ছিলেন। এইরূপ অবগত হওয়া যায় যে, জমানবিশ ১৭৮৬ খ্রীঃ অব্দের জুন মাসে রায়রায়ানের নিকট বাঙ্গল৷ ১১৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯০ এবং ১১৯১ সালের বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার যাবতীয় জমাওয়াশীল বাকি উপস্থাপিত