সিধা প্রতিনিয়ত বিতরিত হইত। চাউল প্রভৃতি পর্বতের ন্যায় পাকারে অবস্থিতি করিত। পুষ্করিণীর ন্যায় চৌবাচ্চা খনন করিয়া তাহাতে তৈল, ঘৃতাদি রক্ষিত হইয়াছিল। নানাবিধ মিষ্টান্নে ব্রাহ্মণ ও ভিক্ষুকদিগকে পরিতৃপ্ত করিয়া, তাহাদিগকে আশাতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। কথিত আছে যে, পুরীধাম হইতে জগন্নাথদেবের সদ্যপ্রসাদ আনাইয়া এই সময়ে ব্রাহ্মণভোজন করান হইয়াছিল। ফলতঃ এরূপ বিরাট শ্রাদ্ধ তৎকালে কেহ সম্পন্ন করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রবাদ আছে।
এই শ্রাদ্ধের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পীড়িত ছিলেন; তজ্জন্য তিনি শ্রাদ্ধসভায় উপস্থিত হইতে পারেন নাই। কৃষ্ণচন্দ্র জ্যেষ্ঠপুত্র শিবচন্দ্রকে গঙ্গাগোবিন্দের মাতৃশ্রাদ্ধে গমন করিতে বলেন। শিবচন্দ্র প্রথমে স্বীকৃত হন নাই। পরে রাজা, গঙ্গাগোবিন্দের অপরিসীম ক্ষমতার উল্লেখ করিয়া তাহাকে উপদেশ দিলে, তিনি অনেক লোকজন লইয়া কান্দীতে উপস্থিত হন। শিবচন্দ্র উপস্থিত হইলে, স্থূপাকার সিধা তাহার নিকট প্রেরিত হয়। শিবচন্দ্র দেওয়ানজীর ভাণ্ডারসঞ্চিত দ্রব্যাদির পরীক্ষার জন্য সে সমস্তই ভিক্ষুকদিগের মধ্যে বিতরণ করিয়া দেন। দেওয়ানজী দ্বিতীয়বার সেইরূপ সিধা পাঠাইলেন, শিবচন্দ্র সেবারও বিতরণ করিয়া দিলেন। তৃতীয়বার যখন গাড়িগাড়ি দ্রব্য উপস্থিত হইতে লাগিল, তখন শিবচন্দ্র আশ্চর্যান্বিত হইয়া উঠিলেন। কথিত আছে যে, কেবল ৪ গাড়ি হরিদ্রাই প্রেরিত হইয়াছিল। শিবচন্দ্র বহুজনাকীর্ণ সভামধ্যে দেওয়ানজীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন,—"দেওয়ানজী, এ যে দেখিতেছি দক্ষযজ্ঞের আয়োজন'! দেওয়ানজী উত্তর করিলেন, “ইহা তদপেক্ষাও অধিক; কারণ দক্ষযজ্ঞে শিবের আগমন হয় নাই; এখানে স্বয়ং শিবই উপস্থিত। তাহার পর শিবচন্দ্র নিজেই কোমর বাঁধিয়া দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধে কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন বলিয়া এতদঞ্চলে প্রবাদ আছে।
এইরূপ মহাসমারোহে দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়। এজন্য জমিদার ও অন্যান্য ভূস্বামিগণ যে যথাসাধ্য অথবা সাধ্যাতিরিক্ত নজর প্রদান করিয়াছিলেন, তাহা বোধ হয়, নূতন করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে না। বর্ধমানের মহারানী দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধে মিষ্টান্ন প্রভৃতিতে ১০১২ খানি নৌকা বোঝাই করিয়া প্রেরণ করিয়াছিলেন। | কিন্তু তাহা যথাসময়ে পৌঁছিতে না পারায় নষ্ট হইয়া যায়।
গঙ্গাগোবিন্দ এই সময়ে নিজ মহত্ত্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সমস্ত রাজা ও মহারাজদিগের জন্য আসন নিদিষ্ট হইলে, তাহার ভূস্বামীর জন্য কোথায় আসন স্থাপিত হইবে, তদ্বিষয়ে তর্কবিতর্ক উপস্থিত হয়। গঙ্গাগোবিন্দ তাহার জন্য স্বতন্ত্র আসনের বন্দোবস্ত না করিয়া, তাহাকে দানোৎসর্গের সময় থাকিতে অনুরোধ করেন। যথাসময়ে ভূস্বামী উপস্থিত হইলে গঙ্গাগোবিন্দ নিজ গাত্র হইতে দোশাল খুলিয়া ভূস্বামীকে বসিতে দেন। দেওয়ানজী এরূপ সম্মান করিতেছেন দেখিয়া, সভাস্থ সকলেই আসন হইতে উখিত হন; তখন দেওয়ানজী করযোড়ে তাহাকে নিজ ভূস্বামী বলিয়া পরিচয় দেন; উক্ত ভূস্বামী বর্তমান জেমুয়ারাজগণের পূর্বপুরুষ। এই আদ্যশ্রাদ্ধে