১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় হইত। সুতরাং সমিতিতে কিরূপ উপযুক্ত লোক নিযুক্ত করিলে, তাহার শাসনভার সুচারুরূপে সম্পন্ন হইতে পারে, তাহা সহজে অনুমান করা যাইতে পারে। যে বিভাগে অনেক প্রধান প্রধান সম্ভ্রান্ত জমিদার ও প্রজা বাস করিত, তাহার শাসনভার বিশেষ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণের হস্তে অর্পণ করাই একান্ত আবশ্যক ছিল। অল্পবুদ্ধি বা নীচপ্রকৃতি ব্যক্তির হস্তে সে ভার প্রদান করা। কদাচ যুক্তিসিদ্ধ নহে। কিন্তু আমরা দেখাইতেছি যে, হেস্টিংসসাহেব কিরূপ লোকের হস্তে বাঙ্গলার তৎকালীন প্রধান প্রদেশের শাসনভার অর্পণ করিয়াছিলেন।
হেস্টিংস বাছিয়া বাছিয়া কতকগুলি অপরিণতবয়স্ক কার্যানভিজ্ঞ ইংরেজ-যুবক লইয়া মুর্শিদাবাদ প্রাদেশিক সমিতির গঠন করিলেন। কি উদ্দেশ্যে এইরূপ অকর্মণ্য বুবকদিগের হস্তে বাঙ্গলার সর্বপ্রধান প্রদেশের শাসনভাব প্রদান করা হয়, তাহা বুঝিতে কাহারও অধিক বিলম্ব হইবে না। তিনি ঐ সমস্ত অপদার্থ লোকদিগকে নামতঃ সমিতির প্রধান কর্তা রাখিয়া, দেবীসিংহকে তাহাদের সহকারী কার্যাধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করিলেন। দেবীসিংহকে নিযুক্ত না করিলে, তাহার অর্থপিপাসা মিটিবার। সুন্দর উপায় সহসা ঘটিয়া উঠিবার সম্ভাবনা ছিল না। হেস্টিংসসাহেব এইরূপ মনে করিয়াছিলেন যে, ইহারা শাসনসম্বন্ধে কিছুই দেখিবে না ও বুঝিবে না, দেবীসিংহ কার্যতঃ সমস্তই করিবেন এবং তাহা হইলে, তাহারও যথেষ্ট সুবিধা হইবে। উপযুক্ত ইংরেজ কর্মচারী নিযুক্ত করিলে, হয়ত, তাহাদের সঙ্গে দেবীসিংহের ঐক্য না হইতে পারে। কাজেই কতকগুলি অল্পবয়স্ক যুবককে তিনি মুর্শিদাবাদ-সমিতির সভ্য করিয়া প্রকৃত প্রস্তাবে দেবীসিংহকেই উক্ত প্রদেশের শাসনভার অর্পণ করিলেন। কয়েক মাস পূর্বে যে দেবীসিংহকে ঘোর অত্যাচারী বলিয়া কোম্পানীর কর্ম হইতে বিতাড়িত করা হইয়াছিল এবং জনসাধারণের অবগতির জন্য যাহার অত্যাচারকথা সরকারী বিবরণীতেও প্রকাশ করা হইয়াছিল, ভারতের প্রধান শাসনকর্তা কোম্পানীর প্রতিনিধি পুনরায় তাহার গুণের যথেষ্ট পরিচয় পাইলেন! এক সময়ে তিনি যাহার চরিত্র ঘোর অন্ধকারময় দেখিয়াছিলেন, এক্ষণে তাহার চরিত্রে কিরূপে উজ্জ্বল আলোক দেখিলেন, তাহা তিনিই বলিতে পারেন। আমরা কিন্তু জানি, সে আলোক দেবীসিংহের চরিত্রের নহে; কিন্তু তাহার সঞ্চিত অগাধ স্বর্ণ, রৌপ্য মুদ্রার মনোমোহন চাকচিক্যের! সেই চাকচিক্যে হেস্টিংসসাহেবের চক্ষু ঝলসিত হইয়া যায়।
দেবীসিংহ মুর্শিদাবাদ-সমিতির সহকারী কার্যাধ্যক্ষ নিযুক্ত হইয়া সেই সমস্ত তরুণবয়স্ক ইংরেজ যুবকদিগকে হস্তগত করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তৎকালে নর্তকীগণের উপর কর স্থাপন করিয়া অনেক টাকার রাজস্ব সংগ্রহ হইত। দেবীসিংহ এই কার্যের জন্য বিশেষ যত্নবান হইলেন। এই সময়ে তিনি দেখিলেন যে, তাহার উচ্চতম কর্মচারিগণ সকলেই অল্পবয়স্ক যুবক। যৌবনের প্রারম্ভে যাবতীয় বিলাসপ্রবৃত্তি তাহাদের হৃদয়মধ্যে ক্রীড়া করিয়া বেড়াইতেছে। সেই বিলাস-প্রবৃত্তির সহায়তার জন্য দেবীসিংহ নর্তকীদিগের মধ্য হইতে কতকগুলি সুন্দরী ও সুগায়িকা