করিতে পারে। দেবীসিংহ ও প্যাটারস তাহার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। বিচারকগণ প্রশ্নের পর প্রশ্ন, উত্তরের পর উত্তর, নানারূপ আপত্তি, আপত্তির খণ্ডন, হিসাবের বিপরীত হিসাব, এইরূপ নানারূপ গোযোগে প্যাটারসনকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিলেন। তাহাদের বিচারপ্রথায় দেবীসিংহের ঘোর অত্যাচার যবনিকাবৃত হইয়া গেল এবং প্যাটারসন তাহাদের চক্ষে দোষী স্থির হইলেন। প্যাটারসন ইচ্ছাপূর্বক দেবীসিংহের নামে দোষারোপ করিয়াছেন স্থির করিয়া, তাঁহারা গবর্নর জেনারেলকে আপনাদের মন্তব্য জ্ঞাপন করিলেন।
রঙ্গপুরের লোকদিগের দুর্দশা দেখিয়া যে মহানুভব ব্রিটনসন্তান আপনার কর্তব্য পালন করিয়াছিলেন, আজ তিনি অপরাধী হইয়া দাড়াইলেন। ন্যায়পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন বলিয়া, এক্ষণে তাহার দুর্দশার একশেষ হইল। তিনি যদি কোম্পানীর অন্যান্য কর্মচারীর ন্যায় দেবীসিংহের অর্থচাকচিক্যে আপনাকে অন্ধ করিতে পারিতেন, কর্তব্যের মস্তকে পদাঘাত করিয়া, স্বার্থসিদ্ধিকে জীবনের একমাত্র উপায় বিবেচনা করিতেন, তাহা হইলে তাহাকে এরূপ অপদস্থ হইতে হইত না। তিনি বুঝিতে পারেন নাই যে, ন্যায়পথ অবলম্বন করিলে, কোম্পানীর কর্মচারিগণ তাহার প্রতি খড়হস্ত হইবেন। তিনি জানিতেন না যে, দেবীসিংহের পদতলে গবর্নর জেনারেল হইতে কোম্পানীর সামান্য কর্মচারী পর্যন্ত আপনাদের জীবন বিক্রয় করিয়াছে।
প্যাটারসন হেস্টিংসের নিকট অপরাধী বলিয়া প্রতিপন্ন হইলে, তিনি তাহার দোষক্ষালনের সাক্ষ্যসংগ্রহের উপায় করিতে বলিলেন। কাজেই তাহাকে বাধ্য হইয়া পুনর্বার রঙ্গপুর প্রদেশে গমন করিতে হইল। যেখানে তিনি দেশের রক্ষক হইয়া গমন করিয়াছিলেন, যাঁহার নিকট প্রাণের কথা খুলিয়া প্রজারা শান্তিলাভ করিয়াছিল, যাহার ন্যায়ানুমোদিত অনুসন্ধানে প্রজাদিগের তাপদগ্ধহৃদয়ে কিঞ্চিত সুবিচারের আশা হইয়াছিল, এক্ষণে সেই প্যাটারসকে সামান্য অপরাধীর ন্যায় সাক্ষ্যসংগ্রহে উপস্থিত হইতে দেখিয়া, তাঁহারা ভীত ও হতাশ হইয়া পড়িল। এক সময়ে যিনি শাসনকর্তৃরূপে গমন করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাহার দুর্দশা দেখিয়া প্রজাগণ ভীত হইয়া, তাহার পক্ষে সাক্ষ্য দিতেও সাহস করিতে পারিল না। তাহার পর হেস্টিংসসাহেব কতিপয় অল্পদিনের নিযুক্ত কর্মচারীকে কমিশনার নিযুক্ত করিয়া, প্যাটারসনের অপরাধের তদন্তের জন্য পাঠাইলেন। যিনি একসময়ে কমিশনার নিযুক্ত হইয়া, অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, এক্ষণে আবার তাহার উপর কমিশনার নিযুক্ত হইল। কমিশনারগণ রঙ্গপুরে গমন করিয়া, অনেক দিন মুখবন্ধেই কাটাইলেন। তাহার পর তাহার পরামর্শ করিয়া, দেবীসিংহকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “তুমি তোমার উকীল না পাঠাইলে, অনুসন্ধানের সুবিধা হইবে না।” দেবীসিংহ উকীল পাঠাইতে অস্বীকার করিলেন। কমিশনারগণ তাহাতে আপনাদিগের কর্তব্য পালন না করিয়া দেবীসিংহকে স্বয়ং উপস্থিত হইতে আদেশ পাঠাইলেন। দেবীসিংহ তাহাই ইচ্ছা