পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৬০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 দশালা বন্দোবস্তের সময় আরও অনেক রহস্য প্রকাশিত হইয়া পড়ে। দশসালা বন্দোবস্তের বিবরণে দেখা যায় যে, দেবীসিংহের দেওয়ান (সম্ভবতঃ হররাম) টেপার চৌধুরাণীদের বাটীতে স্ত্রী-পদাতিক পাঠাইয়া বলপূর্বক রাজস্ব বৃদ্ধি করিয়া লয়।[১] এইরূপ অনেক অত্যাচার প্রকাশ পাইয়াছিল।

 দেবীসিংহ যেরূপ ললামহর্ষণ অত্যাচার করিয়াছিলেন, তাহাতে তাহার কিছুমাত্র দণ্ড হয় নাই। তিনি যে অপরিমিত সম্পত্তি উপার্জন করিয়াছিলেন, দরিদ্র প্রজাদিগের সর্বস্ব অপহরণ করিয়া যে পুঞ্জীকৃত অর্থরাশিতে আপনার ভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াছিলেন, তাহারই কিছু কিছু ব্যয় হইয়াছিল মাত্র। কোম্পানীর কর্মচারীদিগকে বশীভূত করিবার জন্য তাহাকে কিঞ্চিত্র অর্থ ব্যয় করিতে হয় বটে, তথাপি অবশিষ্ট যে সমস্ত সম্পত্তি ছিল, তাহাতেই তিনি তৎকালে সম্পত্তিশালী লোকদিগের মধ্যে গণনীয় হইয়া অবশেষে রাজোপাধিতে ভূষিত হন।[২] কোম্পানীর বিচারে তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু যাঁহার সর্বদর্শী চক্ষুর সমক্ষে একটি সামান্য তৃণও উপেক্ষিত হয় না, তাহার বিচারে যে তিনি অব্যাহতি পান নাই, তাহা মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারা যায়।

 যৎকালে দেবীসিংহের বিচার শেষ হয়, তাহার পূর্ব হইতে লর্ড কর্নওয়ালিসের রাজত্ব আরম্ভ হইয়াছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস ইংলণ্ড যাত্রা করিয়াছিলেন। দেবীসিংহ নিষ্কৃতি পাইয়া, কোম্পানীর আর কোন কার্যে নিযুক্ত হন নাই; অন্ততঃ কর্নওয়ালিসের সময় তাহার সে আশাও ছিল না। তিনি যে বিপুল অর্থ ও জমিদারী প্রভৃতি হস্তগত করিয়াছিলেন, তাহাতেই তাহার শেষ জীবন অতিবাহিত হয়। মুর্শিদাবাদের নশীপুর তাহার বাসস্থান ছিল; তথায় তিনি জীবনের শেষ ভাগ যাপন করেন। ১৮০৫ খ্রীঃ অব্দে তাহার মৃত্যু হয়। অদ্যাপি তাহার বংশধরগণ নশীপুরে অবস্থিত করিতেছেন।

 দেবীসিংহের দুই পত্নী ছিলেন; জ্যেষ্ঠার নাম মন্নকিশোরী ও কনিষ্ঠার নাম কৃষ্ণা। উভয়েই নিঃসন্তান হওয়ায়, দেবীসিংহ স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা বাহাদুরসিংহের দ্বিতীয় পুত্র বলবন্তসিংহকে দত্তকপুত্র গ্রহণ করেন। বলবন্তসিংহের পুত্র গোপালসিংহ হইতে দেবীসিংহের বংশধারা অনন্ত কালসাগরে মিশিয়া যায়। এক্ষণে বাহাদুরসিংহের বংশীয়েরা তাহার জমিদারীর অধিকারী। বাহাদুরসিংহের তৃতীয় পুত্র রাজা উদ্বন্তসিংহ দেবীসিংহের কলঙ্ক মোচন করিয়া, দেশমধ্যে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিলেন। তাহার জমিদারীর অধিকাংশ আয়ই দেবতা, ব্রাহ্মণ ও দরিদ্রদিগের জন্য

  1. Glazier's Report on Rungpore, p. 22.
  2. কিন্তু বোর্ড অব রেভিনিউতে প্রেরিত মুর্শিদাবাদের কালেক্টরের ১৮০৫ সালের ৩০শে এপ্রিল তারিখের পত্রে তাহাকে মহারাজ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে দেখা যায়। Hunters Bengal Records, Vol. IV, p. 228.