পরিমাণে কার্যসিদ্ধির সম্ভাবনা আছে। ইহাতে দুই লক্ষেরও অধিক অর্থব্যয় হইতে পারে। কিন্তু জগৎশেঠগণ জানিতে পারিলে সেখানেও বাধা দিতে পারেন। কারণ সম্রাটুদরবারেও তাঁহাদের ক্ষমতা বড় কম নহে।”১৩ নবাব ও বাদশাহ উভয়ের দরবারে শেঠদিগের প্রাধান্য থাকায় তাহদের ক্ষমতা প্রতিহত করা অত্যন্ত দুষ্কর হইত।
নবাব আলিবর্দী খাঁকে মহারাষ্ট্রীয়গণের অত্যাচার নিবারণের জন্য তাঁহাদের সহিত বারংবার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতে হয়। তজ্জন্য যখনই তাহার অর্থের প্রয়োজন হইত, শেঠেরা তৎক্ষণাৎ তাহাকে সাহায্য করিতেন এবং তিনি শেঠদিগের পরামর্শ ব্যতীত কখনও রাজকার্য নির্বাহ করিতেন না। আলিবদী তাহার প্রিয়তম সিরাজকে শেঠদিগের পরামর্শানুসারে কার্য করিতে উপদেশ দিয়া যান। সিরাজ কিছুদিন পর্যন্ত মাতামহের উপদেশপালনে চেষ্টা করিয়াছিলেন।১৪ ১৭৫৬ খ্রীঃ অব্দের এপ্রিল মাসে আলিবদাঁর মৃত্যু হইলে, সিরাজ বাঙ্গল, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাহার সিংহাসনপ্রাপ্তির পূর্ব হইতে এক ভীষণ ষড়যন্ত্রের আয়োজন হইতেছিল। জগৎশেঠ মহাতপচাদও অবশেষে এই ষড়যন্ত্রে যোগদান করেন। সিরাজ অত্যন্ত অস্থিরবুদ্ধি ও চঞ্চলপ্রকৃতি ছিলেন। যাহার সহিত যেরূপ ব্যবহার করা উচিত, তিনি সকল সময়ে তাহা করিয়া উঠিতে পারিতেন না। তাঁহার কটুবাক্যপ্রয়োগে প্রধান প্রধান কর্মচারিগণ অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া উঠেন। এই সময়ে কতকগুলি স্বার্থপর লোকও আপনাদিগের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সিরাজকে পদচ্যুত করিবার সুযোগ অনুসন্ধান করিতেছিল। ক্লমে এক ষড়যন্ত্রের আয়োজন হইলে, জগৎশেঠ তাহাতে লিপ্ত হইয় পড়েন।
পূর্বে কথিত হইয়াছে যে, সিরাজ চাপল্যবশতঃ সময়ে সময়ে অনেককে অযথা বাক্য প্রয়োগ করতেন। জগৎশেঠ মহাতপচাদের প্রতিও সেইরূপ বাক্য প্রযুক্ত হইত। মুতাক্ষরীনে লিখিত আছে যে, সিরাজ মহাতপচাদকে প্রায়ই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিতেন, এবং সময়ে সময়ে মুসল্মানী করার ভয় দেখাইতেন।১৫ এই সমস্ত কারণে জগৎশেঠ তাহার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। ব্যাপার ক্রমশঃ অত্যন্ত গুরুতর হইয়া উঠে।
পূর্বে নিয়ম ছিল যে, কোন নূতন নবাব মসনদে উপবিষ্ট হইলে, জগৎশেঠ দিল্লী হইতে তাঁহার সনন্দ আনাইয়া দিতেন। সিরাজের সিংহাসনারোহণের সময় সনন্দ আনীত হয় নাই। সিরাজ সনন্দ না পাওয়ায়, তাহার জ্যেষ্ঠতাত সৈয়দ আহম্মদ ও মাতৃত্বসার পুত্র পূর্ণিয়ার নবাব সওকতজঙ্গ বাঙ্গলার সুবেদারীলাভের চেষ্টা করিতে
১৩ Report of the Select Committee. Appendix VI, Pt. I. Also Long's Selection, p. 47.
১৪ Orme, Wol, II. p. 53. Also, Mill's India, VII. p. 236.
১৫ Seir Mutaqherin (Trans.), Vol. I, p. 759.