পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৫০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

অবগত আছেন যে, জগৎশেঠের পিতা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য-স্থাপনের জন্য বিশিষ্ট রূপ সহায়তা করিয়াছেন এবং তিনি কোম্পানীরও যথেষ্ট উপকার করিয়াছেন। উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ হইতে প্রত্যাগমনের পর তিনি তাহাদিগের প্রার্থনা পূর্ণ করিতে চেষ্টা পাইবেন। কিন্তু হেস্টিংসের প্রত্যাগমনের পূর্বেই ৩৯ বৎসর বয়সে সহসা কন্ঠরোধ হইয়া খোশালাদের মৃত্যু হয়।

 খোশাচাঁদ অমিতব্যয়ী ছিলেন; কিন্তু তাহার অধিকাংশ অর্থ সৎকার্যেই ব্যয়িত হইত। পরেশনাথ পাহাড়ের কতকগুলি জৈনমন্দির খোশালাদের নিমিত। তাহার পূর্বপুরুষেরা সম্রাট মহম্মদ শাহের নিকট হইতে পরেশনাথের অনেক ভূভাগ নিষ্কররূপে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; সম্রাটপ্রদত্ত ভূভাগের ফার্মান অনেক দিন পর্যন্ত জগৎশেঠদিগের নিকট ছিল; এক্ষণে স্থানান্তরিত হইয়াছে। পরেশনাথ পাহাড়ের মন্দির ও গুমটি অদ্যাপি খোশালাদের নাম কীর্তন করিতেছে। সেই সমস্ত মন্দির এক্ষণে জৈন বণিকসম্প্রদায়-কর্তৃক রক্ষিত হইয়াছে। খোশালাদের অনেক সৎকীতির কথা শুনিতে পাওয়া যায়। এরূপ কথিত আছে যে, কোন জগৎশেঠ পত্নীর ধর্মার্থে ১০৮টি পুষ্করিণী খনন করাইয়াছিলেন। কাহার সময় সে পুষ্করিণী খনন করা হয়, তাহা ঠিক করিয়া বলা যায় না। আমাদের বিবেচনায় সে-সকল খোশালাদেরই কৃত হওয়া সম্ভব। জগৎশেঠদিগের বাটীর নিকট একটি সুন্দর উদ্যান আছে; তাহাও খোশালাদের নিমিত; সেইজন্য তাহাকে খোশালবাগ বলিয়া থাকে। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, খোশালচাঁদের যে-সমস্ত অর্থ ছিল, তাহা ভূগর্ভে প্রোথিত থাকায় এবং সহসা তাহার মৃত্যু হওয়ায়, তিনি কাহারও নিকট সে কথা প্রকাশ করিয়া যাইতে পারেন নাই; বোধ হয়, সেইজন্য তাহার পর হইতে শেঠদিগের ঘোর দুর্দশা উপস্থিত হয়।

 খোশালাদ অপুত্রক হওয়ায়, ভ্রাতুস্পুত্র হরকাচাঁদকে দত্তকপুত্র গ্রহণ করেন। খোশালাদের মৃত্যুতে হেস্টিংস অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি ১৭৮২ খ্রীঃ অব্দে বালক হরকাদকে খেলাত ও জগৎশেঠ উপাধি প্রদান করেন। এই সময় হইতে কোম্পানী নিজেই উপাধি প্রদানাদির ক্ষমতা গ্রহণ করিয়াছিলেন। হেস্টিংস এই কথা ব্যক্ত করেন যে, হরকাদ বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে, খোশালাদের প্রার্থনার বিষয় বিবেচনা করিবেন। কিন্তু তাহার পরই তাহাকে ইংলণ্ডে গমন করিতে হয়। খোশালাদের সময় অনেক অর্থের ব্যয় হওয়ায়, হরকাদ প্রথমতঃ অত্যন্ত অর্থকষ্টে পতিত হইয়াছিলেন। তাহার পর পিতৃব্য গোলাপচাঁদের উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করায়, তাহার কষ্টের কথাৎ লাঘব হয়। হরকাদ আপনাদিগের পূর্বপুরুষগণের জৈন ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া, বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন। তাহার বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণের একটি কারণ শুনিতে পাওয়া যায়। হরকাদ নিঃসন্তান হওয়ায় সর্বদা, অত্যন্ত বিষন্ন থাকিতেন। তিনি সন্তানলাভের আশায় জৈন মতে অনেক ধর্মানুষ্ঠান করেন। কিন্তু তাহাতে পুত্রমুখ দর্শন করিতে পান নাই। এই সময় একজন বৈষ্ণব সন্ন্যাসী তাহার গৃহে উপস্থিত হন। তিনি হরকচাঁদের