পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বঙ্গাধিকারী
৫৯

কার্য করিতেন এবং বিনোদর নিকট হইতে ৩ লক্ষ টাকার পেঙ্কশ স্বীকার করা হয়। বাদশাহ আরঙ্গজেবের রাজত্বের দশম বৎসরে রঘুনাথ নামক এক ব্যক্তি কাননগোই ফার্মান প্রাপ্ত হইয়াছিলেন বলিয়া, তাঁহার নিকট হইতে ত্রিশ হাজার টাকা পেঙ্কশ লইয়া অর্ধাংশ কাননগোর ভার প্রদান করা হয়।

 আরঙ্গজেবের রাজত্বের দ্বাদশ বর্ষে রামজীবনের আবেদনে জানা যায় যে, দেবকীর প্রদত্ত অর্ধাংশ কাননগোর ভার আজিও তাহার ভাগ্যে ঘটিয়া উঠে নাই। এইজন্য রামজীবন দেবকীর প্রকৃত উত্তরাধিকারী কিনা জানিয়া, তাহাকে অর্ধাংশ কাননগোর ভার প্রদানের আদেশ হয়। সুতরাং একই ফার্মান হইতে আমরা উভয় কাননগোর নিয়োগের আদেশ জানিতে পারিতেছি। এই দেবকী ও রামজীবন ভট্টবাটীবংশীয় কাননগোগণের আদিপুরুষ। তাহার পূর্বে রাজস্ববিভাগের কোন উচ্চতম পদে অভিষিক্ত ছিলেন। হরিনারায়ণ অর্ধাংশ কাননগোর ভারপ্রাপ্ত হইলেও তাহার সময় হইতেই বঙ্গাধিকারিগণের শ্রীবৃদ্ধি বিশিষ্টরূপে আরম্ভ হয়, এবং তাহাদের ক্ষমতাও অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠে। রাজধবিভাগের ভার একরূপ তাহাদের হস্তে ন্যস্ত ছিল। জমিদারগণ বঙ্গাধিকারীকে অত্যন্ত ভয় করিয়া চলিতেন। তাঁহারাা ইচ্ছা করিলে, একের জমিদারী অন্যকে প্রদান করিতে পারিতেন। নবাব তাহাদের পরামর্শসম্বন্ধে কোনরূপ আদেশ দিতেন না। রাজশ্ববিষয়ে দেওয়ান প্রধান কর্মচারী হইলেন তাহাকে বঙ্গাধিকারিগণের পরামর্শানুসারে চলিতে হইত। ফলতঃ রাজস্ববিষয়ে বাধিকারিগণ যাহা ইচ্ছা করিতে পারিতেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তাঁহাদের ক্ষমতার একটি উদাহরণ দেওয়া যাইতেছে।

 একদিন বঙ্গাধিকারী রাজকার্য শেষ করিয়া সন্ধ্যাকালে একখানি সুন্দর তরণীতে অধিরূঢ় হইয়া নদীবক্ষে বায়ুসেবন করিতেছিলেন। সেই সময়ে ঢাকা জেলার অন্তর্গত চাঁদপ্রতাপ প্রভৃতি পরগণার জমিদাগণের পূর্বপুরুষ সেইরুপ শোভাশালিনী অন্য এক তরণীতে আরোহণপূর্বক মহাড়ম্বরে সেই স্থান দিয়া গমন করিতেছিলেন। দৈববলে উক্ত জমিদারের নাবিকগণের ক্ষেপণীনিক্ষিপ্ত জল বঙ্গাধিকারীর গাত্রে পতিত হয়। ইহাতে বঙ্গাধিকারী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উক্ত জমিদারের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিতে আদেশ দেন। সেই সময়ে ঢাকার উলাইল গ্রামের মিত্রবংশীয়ের। রাজস্ববিভাগের কার্য করিতেন। তাঁহাদের অনুরোধে উক্ত জমিদার অবশেষে বঙ্গাধিকারীর ক্রোধাগ্নি হইতে নিষ্কৃতি লাভ করেন।[১]

 হরিনারায়ণের সময় হইতে বঙ্গাধিকারিগণের সৎকীতি বঙ্গভূমিকে অলঙ্কত করিতে আরম্ভ করে। হরিনারায়ণ আপনাদিগের আদিবাসস্থান খাজুরডিহি গ্রামে হরি-সাগর নামে এক প্রকাণ্ড দীঘি খনন করান; অদ্যাপি তাহা বর্তমান আছে। প্রসিদ্ধ পীঠস্থান ক্ষীরগ্রামের যোগাদ্যাদেবীর সেবার বন্দোবস্তের জন্য তিনি ১৬শত

  1. চন্দ্রদ্বীপের রাজবংশ (ব্রজসুন্দর মিত্র), ৪৪-৪৫ পৃঃ