পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৬০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

টাকার ভূসম্পত্তি প্রদান করিয়াছিলেন এবং জ্ঞাতি ও ব্রাহ্মণদিগকেও অনেক টাকার ভূসম্পত্তি প্রদান করেন। এইরূপ কথিত আছে যে, কেবল জ্ঞাতিদিগকে তিনি ১৬ হাজার টাকার ভূসম্পত্তি প্রদান করিয়াছিলেন। ইহা হইতে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, সে সময়ে তাহার উন্নতির কত উচ্চ সীমায় উপনীত হইয়াছিলেন। বঙ্গাধিকারিগণের অধিকাংশ সৎকীর্তি হরিনারায়ণের সময় হইতে সূচিত হয় এবং ক্ষমতার প্রাবল্যহেতু এই সময় হইতে তাঁহারা প্রকৃত বঙ্গাধিকারী হইয়া উঠেন।

 হরিনারায়ণের পর তাহার পুত্র দর্পনারায়ণ কাননগো পদে নিযুক্ত হইয়া ঢাকায় অবস্থিতি করিতে থাকেন। নবাব আজিম ওখানের সময় মুশিদকুলী জাফর খা ঁবাঙ্গলার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়া ঢাকায় আগমন করেন। তথায় নবাবের সহিত দেওয়ানের বিশিষ্টরূপ মনোবিদ সংঘটিত হওয়ায় দেওয়ান মুর্শিদকুলী রাজস্ববিভাগের সমস্ত কর্মচারী লইয়া ১৭০৪ খ্রীঃ অব্দে মুর্শিদাবাদে আসিতে বাধ্য হন। তাহার সঙ্গে সঙ্গে দর্পনায়ায়ণও আগমন করিয়া ডাহাপাড়ায় আপনার নিবাসস্থান স্থাপন করেন। কিন্তু তিনি পুখুরিয়াকে আপনার প্রকৃত বাসস্থান বলিয়া পরিচয় দিতেন। দ্বিতীয় কাননগো জয়নারায়ণ ভট্টবাটীতে অবস্থান করিতে থাকেন। মুর্শিদকুলী খা ঁবাঙ্গলার রাজস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করিয়া দাক্ষিণাত্যে সম্রাট আওরঙ্গজেবের শিবিরে উপস্থিত হওয়ার জন্য আয়োজন করেন। সম্রাট সেই সময়ে দুর্দান্ত মহারাষ্ট্রীয়দিগকে দমন করিবার জন্য দক্ষিণে অবস্থান করিতেছিলেন। রাজস্ব-সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রে কাননগোর স্বাক্ষরের আবশ্যক হইত। দেওয়ান মুশিদকুলী প্রথম কাননগো দর্পনারায়ণকে সেই সমস্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিতে বলিলে, দর্পনারায়ণ কাননগোর রসুম বাবদে ৩ লক্ষ টাকার দাবী করেন। দেওয়ান দাক্ষিণাত্য হইতে প্রত্যাগত হইয়া তাহাকে এক লক্ষ টাকা দিতে স্বীকৃত হন। কিন্তু দর্পনারায়ণ তাহাতে সম্মত হন নাই। দেওয়ান তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া দ্বিতীয় কাননগো জয়নারায়ণের দ্বারা স্বাক্ষর করাইয়া লন।[১] অবশেষে দাক্ষিণাত্যে গমন করিয়া সম্রাটের নিকট সমস্ত কাগজপত্র প্রদান করেন। পরে দাক্ষিণাত্য হইতে পুনর্বার মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন।

 আরঙ্গজেবের মৃত্যু হইলে, গৃহবিচ্ছেদে যখন মোগলসাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হওয়ার

  1. কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, নাটোরাজবংশের আদিপুরুষ রঘুনন্দনও সেই সমস্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিতেছিলেন। রঘুনন্দন সেই সময়ে নায়েব কাননগোর কার্য করিত্নে এবং ঐরূপ স্বাক্ষর করায়, তিনি মুশিদকুলী খাঁর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হইয়া উঠেন। রঘুনন্দনের স্বাক্ষর সম্বন্ধে বিশেষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রিয়াজ প্রভৃতি গ্রন্থে কেবল দ্বিতীয় কাননগো জয়নারায়ণের স্বাক্ষর করার কথাই আছে। বেভারিজ সাহেব ভট্টাচার্যবংশীয় জয়নারায়ণের সহিত পুটিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতা জয়নারায়ণের গোল করিয়াছেন। তৎকালে ভট্টবাটীবংশীয় জয়নারায়ণ সিংহই দ্বিতীয় কাননগোর কার্য করিতেন। পুটিয়ার দর্পনারায়ণের তা জয়নারায়ণের কাননগোর কার্য করার কোন উল্লেখ নাই॥